শহিদমিনার ব্যবহার করতে পারবে না ধর্মভিত্তিক সংগঠন

সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদমিনার ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এর মধ্যে একটি সিদ্ধান্ত হচ্ছে কোনো ধর্মভিত্তিক সংগঠন শহিদমিনার ব্যবহার করতে পারবে না।

শনিবার (১১ মার্চ) সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদমিনার পরিচালনা বিষয়ক সভায় এ সিদ্ধান্তের কথা জানান সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী

সভায় জানানো হয়, সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদমিনার যথানিয়মেই পরিচালিত হবে। শহিদমিনারের কোনো স্থাপনার কোনোভাবেই বাণিজ্যিক ব্যবহার হবে না। শহিদমিনারে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ তথা ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক কার্যক্রম যাতে নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হতে পারে এবং শহিদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের পবিত্রতা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবে সিলেট সিটি কর্পোরেশন।

সভায় ২০২০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত এক সভায় ‘সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদমিনার বাস্তবায়ন পরিষদ’ এর কার্যক্রম স্থগিত এবং ‘শহিদমিনার ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন’ এর দায়িত্ব সিলেট সিটি কর্পোরেশনকে হস্তান্তরের সময় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহের আলোকেই শহিদমিনার পরিচালিত হবে বলে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সেই সাথে জাতীয় দিবসসমূহে শহিদমিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের ক্ষেত্রে প্রথমে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং পরে রাষ্ট্রের পদমর্যাদা ক্রম (ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্ট) অনুযায়ী হবে।

সভায় গৃহিত সিদ্ধান্তসমূহ হলো :

১. সিলেট নগরের চৌহাট্টাস্থ সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদমিনার সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের সামগ্রিক দায়িত্ব সিলেট সিটি কর্পোরেশন পালন করবে। শহিদমিনারের কর্মচারী নিয়োগ, বরখাস্ত, কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান এবং শৃঙ্খলা সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়াদি সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বে পরিচালিত হবে।

২. শহিদমিনারে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ তথা ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক কার্যক্রম যাতে নির্বিঘ্নে এবং যথোপযুক্তভাবে অনুষ্ঠিত হতে পারে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ তা নিশ্চিত করবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কিংবা শহিদমিনারের মৌল ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো সাম্প্রদায়িক কার্যক্রম যাতে না হয় সে বিষয়ে সিটি করপোরেশন সদা সতর্ক ও যত্নবান থাকবেন।

৩. বইমেলা ছাড়া অন্য কোনো বাণিজ্যিক কার্যক্রম শহিদমিনারে করা যাবে না।

৪. শহিদমিনারে কোনো অনুষ্ঠান বা যেকোনো কার্যক্রম আয়োজনের ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের পূর্বানুমতি প্রয়োজন হবে। অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে ২ ও ৩ নম্বর দফায় বর্ণিত নীতিসমূহ নিষ্ঠার সঙ্গে বিবেচনা করবেন এবং অনুষ্ঠানের ধরণ উল্লেখপূর্বক অনুমতি প্রদান করবে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। এছাড়া ধর্মভিত্তিক কোনো সংগঠনকে শহিদমিনার ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে না।

৫. অমর একুশে ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণসহ অপরাপর অনুষ্ঠানসমুহ সঞ্চালনা সম্মিলিত নাট্য পরিষদ, সিলেট ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সিলেট এ যাবৎকালে চলে আসা নিয়মানুযায়ী করবে। তবে ভবিষ্যতে এ সমস্ত সংগঠনের কোনো একটি বা উভয়টি অস্থিত্বহীন হয়ে পড়লে কিংবা দায়িত্ব পালনে অক্ষমতা প্রকাশ করলে তৎকালে ক্রিয়াশীল সংস্কৃতি ও নাট্যকর্মীগণ ঐকমত্যের ভিত্তিতে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

৬. শহিদমিনার বাস্তবায়ন পরিষদ নেতৃবৃন্দের নামফলক বর্তমানে যেভাবে আছে সেভাবে সংরক্ষণ করা হবে। এখানে কোনো সংযোজন বা বিয়োজন করা যাবে না। পুনর্নির্মাণ, সংস্কার, সৌন্দর্য বৃদ্ধি ইত্যাদি ক্ষেত্রে নামফলক সাময়িকভাবে সরানোর প্রয়োজন হলে এতে লিখিত সকল নাম অবিকৃতভাবে এবং হুবহু ক্রমানুসারে তা পুনঃস্থাপন করতে হবে।

৭. বিভিন্ন জাতীয় দিবসে শহিদমিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের ক্ষেত্রে শহিদমিনার বাস্তবায়ন পরিষদের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদনের যে নিয়ম চলে আসছে তা স্থগিত করা হলো। এখন থেকে বাস্তবায়ন পরিষদের নামে কোনো শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে না।

৮. শ্রদ্ধা নিবেদনের ক্ষেত্রে নিম্নে উল্লেখিত ক্রম অনুসরণ করা হবে।

ক) জাতীয় দিবস সমূহে শহিদমিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের ক্ষেত্রে প্রথমে বীর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এবং পরে রাষ্ট্রের পদমর্যাদা ক্রম (ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্ট) অনুসারে হবে। একইভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা ক্রম অনুসরণ করা হবে।

সভায় উপস্থিত ছিলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সদর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা পান্না লাল রায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান চৌধুরী, সিলেট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, রাজনীতিবিদ অ্যাডভোকেট বেদানন্দ ভট্টাচার্য্য, রাজনীতিবিদ সিকান্দর আলী, রাজনীতিবিদ মো. আরিফ মিয়া, সিনিয়র সাংবাদিক আল আজাদ, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রবি কিরণ সিংহ রাজেশ, সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মো. আজবাহার আলী শেখ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক শামসুল আলম সেলিম, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোকাদ্দেস বাবুল, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের প্রধান পরিচালক অরিন্দম দত্ত চন্দ, পরিচালক অনুপ কুমার দেব, পরিচালক অর্ধেন্দু দাশ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের সাধারণ সম্পাদক গৌতম চক্রবর্তী, নজরুল পরিষদ সিলেটের সভাপতি আমিরুল ইসলাম বাবু, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়কারী রজত কান্তি গুপ্ত, চারুশিল্পী সমন্বয় পর্ষদ সিলেটের সদস্য সচিব শামসুল বাছিত শেরো, নৃত্যশৈলীর প্রধান সমন্বয়ক বিভাষ শ্যাম পুরকায়স্থ (যাদন), লিটল থিয়েটার সিলেটের আহ্বায়ক মো. আব্দুল কাইয়ূম মুকুল, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহিত চৌধুরী, সিসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আলম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ হানিফুর রহমান, মেয়রের একান্ত সহকারী সচিব সোহেল আহমদ, সহকারী প্রকৌশলী এবিএম মহসিন উদ্দিন, জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল আলিম শাহ প্রমুখ।