সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদমিনারে কোনো অনুষ্ঠান আয়োজনে সিলেট সিটি করপোরেশনকে ফি দিতে হবে; এমন একটি খবর গেল কয়েকদিন ধরে বেশ আলোচিত হচ্ছে সিলেটে। এতে ক্ষুব্দ হয়েছেন সিলেটের সংস্কৃতিকর্মীসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।
তারা নানা মাধ্যমে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এমনকি পালিত হয়েছে প্রতিবাদ কর্মসূচিও। এই ক্ষোভের খবর পৌঁছে গেছে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর কাছেও।
এমন বাস্তবতায় গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
রোববার (৪মার্চ) সিসিকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান- শহিদমিনারের কোন স্থাপনার বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত করতে দেয়া হবে না।
এতে মেয়র বলেন, ‘শহিদমিনার নিয়ে কোন ধরণের বিভ্রান্তির সুযোগ নেই। শহিদমিনারে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ তথা ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক কার্যক্রম যাতে নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হতে পারে এবং শহীদ বুদ্ধিজীবি কবরস্থানের পবিত্রতা রক্ষায় যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। শহিদমিনার ও শহীদ বুদ্ধিজীবি কবরস্থানের পবিত্রতা কোনভাবেই লঙ্ঘিত হতে দেওয়া হবে না।’
তিনি আরো জানান, সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদমিনার পরিচালনা বিষয়ে আগামী ১১ মার্চ শনিবার অনুষ্ঠিতব্য নির্ধারিত সভায় সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, শহিদ মিনার নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিষয়টি সবার কাছে পরিষ্কার করার জন্য শহিদমিনার পরিচালনা বিষয়ক সভা ডেকেছেন মেয়র। আগামী ১১ মার্চ সকাল ১১টায় সিলেটের সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও নাগরিক প্রতিনিধিদের নিয়ে নগর ভবনে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল আলিম শাহ।
সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদমিনারের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে সিটি করপোরেশন। নিয়মিতই এখানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। শহিদমিনার ব্যবহারের জন্য সিসিক থেকে লিখিত অনুমতি নিতে হলেও এর জন্য কোনো ফি দিতে হয় না। বিনামূল্যেই এই চত্বর ব্যবহার করা যায়।
কিন্তু মার্চ মাস থেকে শহিদমিনার চত্বর ব্যবহারের জন্য ফি নির্ধারণ করছে সিলেট সিটি করপোরেশন- এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায়।
এমনকি সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদমিনার নিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের দুরভিসন্দিমূলক সিদ্ধান্ত রুখে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সিলেটের প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এর জেলা সদস্য সচিব প্রণব জ্যোতি পাল বলেন, ‘শহিদমিনার চত্বর ব্যবহারের জন্য ফি দিতে হবে- এমন সিদ্ধান্ত ন্যাক্কারজনক। আমরা এ খবর জানার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছি। সিদ্ধান্ত বাতিল করার দাবি জানাচ্ছি।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, শহিদমিনারের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য ফি নির্ধারণ অবশ্যই উচিত না। শহিদ মিনার আমাদের শ্রদ্ধার জায়গা, এটি ব্যবসার জায়গা নয়। ইতোপূর্বে শহিদমিনার ঘিরে ব্যবসার চেষ্টা করেছেন সিসিক মেয়র, যা সিলেটবাসী প্রতিহত করেছে। এবারও সিলেটবাসী মেয়রের এমন অপচেষ্টা প্রতিহত করবে।
সম্মিলিত নাট্য পরিষদ, সিলেটের সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত বলেন, ‘এমন খবর শুনে আমরা সংস্কৃতিকর্মীরা তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানিয়েছি। মেয়র বলেছেন এ ব্যাপারে আলোচনার জন্য তিনি আমাদের সঙ্গে বসতে চান। কিন্তু আমরা এই ইস্যুতে বসতে রাজি নই। আমাদের একটাই দাবি, শহিদমিনার ব্যবহারের জন্য কোনো ফি আদায় করা যাবে না। তবে মেয়র যদি শহিদমিনারের উন্নয়ন বা শৃঙ্খলা অথবা এই স্থান ব্যবহারের নিয়ম-নীতি নিয়ে আলোচনা করতে চান, আমরা অবশ্যই বসতে রাজি আছি।’
জানা গেছে, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদমিনার বরাদ্দ নিতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সিটি করপোরেশনে লিখিত আবেদন নিয়ে যান বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সিলেট জেলা সাধারণ সম্পাদক খায়রুল হাছান। তখন সিসিক কর্মকর্তারা তাঁকে জানান, ১ মার্চ থেকে শহিদমিনার ব্যবহারে ফি প্রদান করতে হবে। পরে এ খবর জানাজানি হলে শুরু হয় তোলপাড়।