জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশে ঋতু পরিবর্তনের চালচিত্র বদলে গেছে। অতীতে আষাঢ়-শ্রাবন ছিল ভরা বর্ষার মৌসুম। কবিতা-সাহিত্যের ছত্রে ছত্রে আর মুখর বর্ণনা উৎকীর্ণ আছে। সেই দিন গেছে বদলে। এখন শরতকালেও থাকছে দেশজুড়ে তুমুল বৃষ্টির ঘনঘটা। শিউলিঝরা আশ্বিনের শেষভাগে এ বছর এত বৃষ্টি অভাবনীয়। বর্ষাবাহী যে মৌসুমী বায়ু তার আগমন-বিদায়ও খামখেয়ালীপনার আবর্তে পড়েছে। এ বছর শরতে এসে রেকর্ড বৃষ্টিপাত হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের হিসাবে, অক্টোবরের এই শুরুতে, মৌসুমি বায়ুর বিদায়লগ্নে রাজধানীসহ দেশের প্রায় সব এলাকায় প্রবল বৃষ্টি হতে দেখা গেছে। টানা বর্ষণে রাজশাহী নগরীর পরিণত হয়েছিল ছোটখাটো নদীতে। ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জে অর্ধশতাব্দীর মধ্যে বৃষ্টির সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছিল। এই অক্টোবরেই ২৪ ঘণ্টায় কিশোরগঞ্জের নিকলীতে ৪৭৬ মিলিমিটার এবং ময়মনসিংহে ৩৮১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত নথিবদ্ধ হয়েছে। তবে মৌসুমী বায়ু সরতে শুরু করেছে।
আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক জানান, বৃষ্টিবাহী দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বিদায় নিতে শুরু করেছে। ১৫ অক্টোবরের মধ্যেই বাংলাদেশ থেকে বিদায় নেবে। দেশের অধিকাংশ এলাকায় শরতের আকাশ উদ্ভাসিত হয়েছে। তবে আগামীকাল থেকে দুই দিন আরেক দফা বিদায়ী দাপট দেখিয়ে শনিবার বিদায় নেবে বর্ষা। এ সময়ে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি বর্ষণ হতে পারে। এছাড়া রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
ড. আবুল কালাম মল্লিক আরও বলেন, তবে ভ্যাঁপসা গরমের প্রবণতা থাকতে পারে চলতি মাসজুড়েই। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তাপমাত্রা ক্রমাগত কমে শীতের আমেজ সৃষ্টি হতে পারে। নভেম্বরের মাঝামাঝি জেঁকে বসবে শীত। আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, এখন মৌসুমী বায়ু উপকূলের দিকে সরতে শুরু করেছে। তবে ১২ অথবা ১৩ অক্টোবরের পর আরেক দফা বৃষ্টির দাপট শেষে বৃষ্টিপাত বিদায় নেবে। অক্টোবরের ১৫ তারিখের পর সারাদেশের আকাশ পরিষ্কার হয়ে যাবে। বাংলাদেশের আবহাওয়া অনুযায়ী মাঝে মাঝে লঘুচাপ বা নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টি হতে পারে। এটাও স্বাভাবিক অবস্থা।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, গতকাল ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশের অধিকাংশ জেলায় কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। মাত্র ১১ টি স্থানে বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ সৈয়দপুরে ১১২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া দিনাজপুরে ৭০, রংপুরে ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সারা দেশে আজ দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
এদিকে এই অক্টোবর মাসে কেন অস্বাভাবিক বৃষ্টি এবং দেশের কিছু অঞ্চলে কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে-এর পেছনের কারণ সম্পর্কে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর তিনটি কারণ উল্লেখ করেছে। এগুলো হলো-বায়ুম্ললে অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প এবং বায়ু; প্রচুর পরিমাণে মেঘ জমে থাকা এবং ইন্ডিয়ান ওশান ডিপোল এর বিকাশ, যা ‘ইন্ডিয়ান নিনো’ নামেও পরিচিত।
তথ্যসূত্র : ইত্তেফাক