শত কোটি টাকার সেতু পারাপারে ভরসা বাঁশের মই!

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা রাজাপুর খেয়াঘাটে ৯৯ কোটি ১৭ লাখ টাকার সেতু পারাপারে বাঁশের মই ভরসা তিন ইউনিয়নের মানুষের। প্রতিদিন উপজেলার পৃথিমপাশা, হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ কয়েক হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে সেতুটি পার হন।

প্রায় শত কোটি (৯৯ কোটি ১৭ লাখ) টাকা ব্যয়ে বছরখানেক আগে নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়া এই সেতু সংযোগ সড়কের জন্য এখন বেকার হয়ে পড়ে আছে। মনু নদীর উপর সেতুটি হওয়া ছিল দুইপাড়ের তিন ইউনিয়নের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। কিন্তু এখন স্বপ্নটি পূরণের কাছাকাছি এসে ঝুলে আছে।

জানা যায়, জমি অধিগ্রহণে দীর্ঘসূত্রতার কারণে সেতুর দুইপাশের সংযোগ সড়ক এখনও হয়নি। এ অবস্থায় উঁচু সেতুর দুইপাশে বাঁশের মই স্থাপন করে চলাচলের ব্যবস্থা করেছেন স্থানীয়রা। প্রতিদিন চরম ঝুঁকি নিয়ে এই মই বেয়ে সেতু পার হন সেখানকার হাজার হাজার মানুষ।

সওজ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের রাজাপুর এলাকায় মনু নদের পাড়ে একটি খেয়াঘাট ছিল। নদের বিপরীত পাশে পড়েছে হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা। রাজাপুরের খেয়াঘাট দিয়ে প্রতিদিন নৌকায় করে নদ পার হয়ে পৃথিমপাশাসহ উপজেলা সদরে বিভিন্ন কাজে আসা-যাওয়া করতেন এসব এলাকার লোকজন। এতে দীর্ঘদিন ধরে তারা দুর্ভোগ পোহাচ্ছিলেন। এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে সেখানে মনু নদের ওপর একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সওজ।

২০১৮ সালের দিকে শুরু হয় ২৩২ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার টাইপের এই রাজাপুর সেতুর নির্মাণকাজ। প্রায় ৯৯.১৭ কোটি টাকার টেন্ডারে ‘জন্মভূমি-ওয়াহিদুজ্জামান-নির্মিতি’ নামে সিলেটের যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কাজ পায়। ২০২১ সালের জুনের দিকে নির্মাণকাজ শেষ হয়ে যায় সেতুটির।

পরে সেতুর দুইপাশে সাড়ে সাত কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়কল্পে ‘জামিল-ইকবাল’ নামে সিলেটের আরেকটি যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কাজ পায়। ২০২০ সালে কাজ শুরুর জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। চলতি বছরের এপ্রিল মাসের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ শেষ না হওয়ায় কাজ সম্পন্ন করা যায়নি নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নবনির্মিত সেতুটি বেশ উঁচু। এটির পূর্ব পাশে প্রায় ৫০ ফুট এবং পশ্চিম পাশে প্রায় ৩০ ফুট উঁচু বাঁশের মই লাগানো। মইয়ের দুই পাশে বাঁশ দিয়ে দেওয়া হয়েছে রেলিং। লোকজন মই বেয়ে সেতুতে ওঠা-নামা করছেন। মানুষের চাপে নড়বড়ে হয়ে পড়েছে উভয় পাশের মই।

ভুক্তভোগীরা জানান, হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের লোকজন প্রতিদিন নানা কাজে সেতু পার হয়ে পৃথিমপাশা ইউনিয়ন এবং উপজেলা সদরে যাতায়াত করেন। সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার কিছুদিন পর পারাপারের সুবিধার্থে সেতুর দুই পাশে মই স্থাপন করেন এলাকাবাসী।

সওজ অধিদফতরের কুলাউড়া সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী পার্থ সরকার বলেন, জমি অধিগ্রহণে দীর্ঘসূত্রতায় সংযোগ সড়কের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। অধিগ্রহণের কাজটি জেলা প্রশাসন থেকে করা হয়ে থাকে। জমি বুঝে পেলেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করে দেবে।

মৌলভীবাজারের সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়া উদ্দিন জানান, নদীশাসন ও জমি অধিগ্রহণসহ পুরো প্রকল্পটিতে সর্বমোট ব্যয় হচ্ছে ৯৯.১৭ কোটি টাকা। সেতুটি সচল করতে জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

এ ব্যাপারে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, সেতু বানানোর পর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। জমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে আমরা আগামী বুধবার সংশ্লিষ্ট সবাইকে ডেকেছি। আশা করি সুরাহা হলে আমরা তা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব।