লিবিয়ায় মাফিয়াদের নির্যাতনে নিহত যুবক সাহেদ আলীর মরদেহ চার মাস পর গ্রামের বাড়ি জগন্নাথপুরে এসে পৌঁছেছে। মরদেহ গ্রামের বাড়ী উপজেলার পাটলী ইউনিয়নের বনগাঁও গ্রামে এলে পরিবারের লোকজনের বুক ফাঁটা কান্নায় ভারি হয়ে উঠে আকাশ বাতাস।
এসময় বাড়ি জুড়ে শুরু হয় কান্নার রোল। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয়ে যেন ঝরছিল স্বজনদের কান্নার জল।
খবর পেয়ে গ্রামের শতাধিক লোক জড়ো হন নির্যাতনে মৃত্যুবরণকারী সাহেদ আলীকে এখনজর দেখতে। রাতেই জানাযা শেষে গ্রামের পঞ্চায়েত কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২১ মে জীবিকার জন্য দালালের মাধ্যমে বনগাঁও গ্রামের মৃত তবারক আলীর ছোট ছেলে সাহাদ আলী চার লাখ টাকা দিয়ে লিবিয়া যায়। সেখানে পরিচয় হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দালাল সাদ্দাম ও সাইফুলের সঙ্গে। গত বছরের নভেম্বর মাসে সাদ্দাম ও সাইফুল তাকে মাফিয়া চক্রের হাতে তুলে দেন। তখন মাফিয়া চক্র তার পরিবারের কাছে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চায়। পরবর্তী ২৫ ফেব্রুয়ারি মাফিয়া চক্রের এক সদস্য ফোন করে পরিবারের নিকট সাহাদ আলীর মৃত্যুর খবর জানায়।
সাহাদ আলীর বোন সেবিকা বেগম জানান, ‘মুক্তিপণের টাকার জন্য আমার ভাইকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। দিনের পর দিন রাখা হয় অনাহারে। আমরা দালাল সাদ্দামের মাধ্যমে মাফিয়া চক্রের সাথে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করে প্রাণ ভিক্ষা চেয়েও ভাইয়ের জীবন বাঁচাতে পারিনি। পরে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় লিবিয়ার ত্রিপলিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদন করে ভাইয়ের লাশ দেশে আনি। চার মাস পর বুধবার আমি ঢাকায় লাশ গ্রহণ করি। পরবর্তীতে বাড়িতে নিয়ে এসে সবাইকে নিয়ে দাফন কাজ শেষ করি।’
সাহাদ আলীর ভাই সৈয়দ আলী জানান, ‘দালাল সাদ্দাম দেশে ব্যাংকে তাদের স্বজনদের মাধ্যমে টাকা নিয়েছে। টাকা নিয়েও আমার ভাইকে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে। আমি ভাই হত্যার বিচার চাই।’
সাহাদ আলীর মা হাজেরা কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমার ছেলের মৃত্যু দেখার আগে কেন আমি মরলাম না, আমার বুক যারা খালি করছে তাদের বিচার চাই।’
বনগাঁও গ্রামের বাসিন্দা তরুণ সমাজকর্মী ইমাদ উদ্দিন আকাশ জানান, ‘পরিবারের ভাগ্য ফেরাতে শেষ সম্বল জায়গা জমি বিক্রি করে লিবিয়া হয়ে ইতালি যেতে চেয়েছিল সাহাদ আলী। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মর্মান্তিক মৃত্যুতে হতদরিদ্র পরিবারটি নিঃশেষ হয়ে গেছে। আমরা দেড়লাখ টাকা চাঁদা তুলে মাফিয়া চক্রের কাছে পাঠিয়ে ছেলেটিকে বাঁচাতে পারলাম না। এমন পরিণতি যেন আর কারো না হয়, রাষ্ট্রের কাছে এটা আমাদের কাম্য।’
জগন্নাথপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে সার্বক্ষণিক পরিবারটির পাশে থেকে সান্ত্বনা ও সহায়তার চেষ্টা করছি। পরিবারের পক্ষ থেকে আইনি সহায়তা চাওয়া হলে আমরা আইনানুগ পদক্ষেপ নেব।’