লাখাইয়ে ধানকাটার শ্রমিক ও ধান কাটার যন্ত্র কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার সংকটে হাওরের পাকা ধান কেটে সময়মতো ঘরে তুলতে বড় ধরণের ভোগান্তিতে পড়েছে কৃষকেরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, এ পর্যন্ত লাখাইয়ে কৃষকদের প্রয়োজনীয় শ্রমিক সংকট লাঘবে ও স্বল্প সময়ে ধান কাটার লক্ষে ৫২টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার শতকরা সত্তর শতাংশ ভর্তুকিমূলে কৃষকদের মাঝে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা ভর্তুকি দিয়ে কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার বরাদ্দ দেওয়া হলেও এর সুফল পুরোপুরিভাবে পাচ্ছে না কৃষককূল।
এদিকে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া আগাম আবহাওয়া সতর্কীকরণে জানানো হয়, ২৪ এপ্রিল থেকে বৃষ্টিপাত, ঝড় ও শিলা বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা। তাই শতকরা ৮০ ভাগ বা তার কাছাকাছি পেকেছে এমন ধান দ্রুত কেটে ফলতে হবে। এমন খবরে কৃষকেরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। কিন্তু প্রয়োজনীয় শ্রমিক ও হার্ভেস্টার এর অভাবে ধান কাটতে না পেরে অপেক্ষার পহর গুনছে। তবে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় হয়তো কৃষকদের ধান কাটা নিয়ে কিছুটা উদ্বেগ হ্রাস পেয়েছে।
উপজেলার পূর্ব বুল্লা গ্রামের কৃষক বিল্লাল মিয়া ও আব্দুল হামিদ বলেন, ‘হার্ভেস্টারের সংকটের কারণে বুল্লাবাজার ও আশেপাশের এবং হাওরের পাকা ধান কাটা যাচ্ছে না। কখন ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়ে যায় বলা মুশকিল। তাই চিন্তায় আছি। হাওরে ধানকাটার যন্ত্র কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার থাকলেও চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।’
একই অভিযোগ সিংহগ্রামের কুদ্দুছ মিয়ারও। তিনি বলেন, ‘আমি এ বছর গোপালপুর হাওরে ১০ বিঘা জমিতে হীরা জাতের ধান চাষাবাদ করেছি। পাকা ধান কাটার জন্য ১ সপ্তাহ থেকে যন্ত্রের জন্য অপেক্ষা করে অবশেষে সোমবার রাতে কিছু জমি কাটার সুযোগ পাই।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, লাখাইয়ে ৫২টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার কথা বক্তব্যে থাকলেও তা লাখাইর মাঠে নেই। এমনকি ৫২টি যন্ত্রের মধ্যে কয়টি লাখাইয়ে রয়েছে এবং কয়টি অনুমতি ব্যতিরেকে অন্যত্র স্থানান্তর হয়েছে সে তথ্য খোদ কৃষি কর্মকর্তাও অবগত নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্রে জানা যায়, লাখাইয়ের কোটায় ভর্তুকি মূলে হার্ভেস্টার বরাদ্দ নিয়ে উপজেলার বাইরে অন্য এলাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে বিধায় এমনটা দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাইন উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘লাখাইয়ে ৫২টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার এর মধ্যে কয়েকটি অনুমতি নিয়ে অন্যত্র স্থানান্তর হয়েছে এবং কয়েকটি বিনা অনুমতিতে উপজেলার বাইরে চলে গিয়েছে। এগুলো ফেরত আনতে আমরা সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছি আজকের মধ্যে চলে আসতে।’
এখন পর্যন্ত এগুলো ফেরত এসেছে কিনা তা জানতে তিনি বলেন, ‘আমি আজই বদলী হয়ে চলে যাচ্ছি।’
আবহাওয়ার পূর্বাভাস থাকা সত্বেও ধানকাটার যন্ত্রগুলো নজরে আনার ও তা মাঠে নামানোর কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে মর্মে জানতে চাইলে তাঁর কাছ থেকে কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।