ধান চাষের উপর নির্ভর করেই লাখাই উপজেলার কৃষকদের জীবন-জীবিকা চলছে যুগ যুগ ধরে। বিশেষ করে বোরোধান চাষাবাদ বর্তমানে বহুলাংশে বেড়েছে।
কৃষি বিভাগের হিসেব মতে চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় ১১১৭৪ হেক্টর জমিতে রেকর্ড পরিমাণ বোরো ধান চাষ হয়েছে যা গত বছরের চেয়ে বেশি। একই সাথে উপজেলায় এবার বোরোধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। যার বাস্তবায়নে কাজ করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
উপজেলায় বোরোধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে প্রায় ৫৭৯৮২ মেট্রিক টন। আর ক’দিন পরেই শুরু হবে হাওরে বোরো ধান কাটার ধুম। প্রথমে পর্যায়ে কাটা হবে ব্রি ধান-২৮ ও হাইব্রিড জাতের ধান। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য জাত। সবুজ ধানের ক্ষেতে পরিচর্যায় কৃষকগণ ব্যস্ত সময় পার করছে। থেমে নেই কৃষি বিভাগের কর্মতৎপরতা। ধান ক্ষেতে নিবিড় পরিচর্যা, নিরবিচ্ছিন্ন সেচ ব্যাবস্থাপনা ও রোগ বালাই দমনে কৃষকদের নিয়মিতভাবে পরামর্শ সেবা দিয়ে যাচ্ছে লাখাই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অমিত ভট্টাচার্য্যের পরামর্শ ও উদ্বুদ্ধকরণে লাখাই ইউনিয়নে ধান আবাদের পাশাপাশি ভুট্টা চাষে ঘটেছে নিরব বিপ্লব। তেমনি প্রকৃতির উপর ভরসা করেই কৃষকরা কৃষি বিভাগের পরামর্শে ধান ফসলের পরিচর্যায় থেমে নেই। কৃষি বিভাগ বরাবরের মতই রোগ প্রবণ জাত হওয়ায় ব্রি ধান- ২৮ চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করে আসছে। কিন্তু হাওরের কিছু নিন্মাঞ্চলের জমিতে আগাম বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেতে ও এর চাল সুস্বাদু হওয়ায় কৃষক নিজ উদ্যোগে এ জাত চাষ করে আসছে। ফলশ্রুতিতে কিছু ব্রি ধান-২৮ এর জমিতে ব্লাস্ট হয়ে ধানে চিটা হতে দেখা গেলেও উপজেলার বোরো উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সমস্যা হবেনা বলে কৃষি বিভাগ আশাবাদী। বিরাজমান বৈরী আবহাওয়ায় রাতে ঠান্ডা, দিনে গরম ও সকালে কুয়াশার কারণে ব্রি ধান ২৮ এর জমিতে ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধ ও দমনে করনীয় সম্পর্কে কৃষকদের জন্য উপজেলা কৃষি অফিস বিভিন্ন প্রচারনার মাধ্যমে নানা উদ্যোগ হাতে নিয়েছে।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা এ আবহাওয়ায় ধানের জমিতে ৭ দিন পর পর ২-৩ বার ছত্রাকনাশক ট্রুপার/ নাটিভো স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছেন, লিফলেট বিতরণ করছেন।
উপজেলার বোরো ধানের উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপপরিচালক মো. নূরে আলম সিদ্দিকীর নির্দেশনায় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাইন উদ্দিন আহমেদ ও কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মো. শাকিল খন্দকার নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করছেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ-দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা ও কৃষকদের বিরামহীন পরামর্শ দিচ্ছেন।
সম্প্রতি হবিগঞ্জের বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মামুনুর রশিদ ও তাঁর টিমসহ লাখাই উপজেলা কৃষি অফিসের অফিসারবৃন্দ হাওরে ধানের রোগ-বালাই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন ও উপস্থিত কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করেন।
কোনরকম বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এ বছর লাখাইতে বাম্পার ফলন আশা করছে কৃষককূল।