আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় হবিগঞ্জের লাখাইয়ে এবারের মৌসুমে রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত ও জমিতে পোকামাকড়ের তেমন কোন আক্রমণ না থাকায় এ বছর সর্বোচ্চ ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলার কৃষক-কৃষানী এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
লাখাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর রোপা আমন মৌসুমে আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছিল ৪ হাজার ৯ শত হেক্টর জমি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লক্ষ্যমাত্রার ছাড়িয়ে গেছে আবাদ। এবার মোট আবাদ হয়েছে ৫ হাজার হেক্টরেরও অধিক জমি। এরমধ্যে ব্রি-ধান ১০৩, ৮৭, ৯০, ৭৫, ৪৯, ৩৯, ২২ ও ২৩, বিনা ধান-৭ ও ১৭-সহ বিভিন্ন জাতের ধান আবাদ করেছেন কৃষকরা। ধারণা করা হচ্ছে এ মৌসুমে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও লাখাইয়ে প্রায় ৯ হাজার ১৯৫ মেট্রিক টন ধান উদ্বৃত্ত হবে।
এছাড়া আশানুরূপ ফলন হওয়ায় এ মৌসুমে লাখাইয়ে ২০ হাজার ৯৪৩ মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হতে পারে বলে ধারণা করছে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর। যার বাজার মূল্য হতে পারে আনুমানিক প্রায় ৭৫ কোটি টাকা। এরইমধ্যে উপজেলার করাব, মোড়াকরি, মুড়িয়াউক ও বামৈ ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে আমনধান কাটা শুরু হয়েছে। তাছাড়া উপজেলার মোট শতকরা ১০-১৫ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে চলতি সপ্তাহের মধ্যেই উপজেলার সব ইউনিয়নে পুরোদমে শুরু হবে ধান কাটার কাজ।
এদিকে, ধান কাটাকে সামনে রেখে ব্যস্ততা বেড়েই চলেছে কৃষকদের মধ্যে। জমি থেকে ধান কাটা, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও পরে শুকিয়ে গোলায় উঠানোর কাজে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন কৃষান-কৃষাণীরা। তবে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে গেছে ধান মাড়াইয়ের কাজ। সনাতনী পদ্ধতির পরিবর্তে ধান মাড়াইয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে ‘কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার’ নামক আধুনিক মেশিন। ফলে অনেকটাই লাঘব হয়েছে কৃষক- কৃষানীর শ্রমের মাত্রা।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার করাব, সিংহগ্রাম, মুড়িয়াউক, বামৈ,মোড়াকরি হাওরে কম্বাইন্ড হার্ভেস্টারের সাহায্যে খুব সহজেই জমি থেকে ধান তুলছেন কৃষকরা। পরে এগুলোকে বস্তাবন্দী করে ছোট-বড় যানবাহনের মাধ্যমে কেউ নিয়ে যাচ্ছেন নিজ বাড়িতে আবার কেউ জমির পাশেই রোদে শুকিয়ে ঘরে তোলার জন্য প্রস্ততি নিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে লাখাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান মিজান বলেন, ‘চলতি মৌসুমে এ যাবতকালের মধ্যে রোপা আমন ধানের সর্বোচ্চ ফলন হয়েছে। ইতিমধ্যে ১০-১৫ শতাংশ জমির ধান কাটা প্রায় শেষ। আশা করছি আগামী ১-২ সপ্তাহের মধ্যেই কৃষকরা বেশিরভাগ ধান কাটা শেষ করে ঘরে তুলতে পারবেন।’