কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে ট্রেন চলাচলের সময় সর্বোচ্চ গতি ২০ কি.মি. রাখার সিদ্ধান্ত কার্যকরের জন্য সচেতনতা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বিশ্ব বন্যপ্রাণি দিবস-২০২৩ উদযাপন উপলক্ষে ব্যতিক্রমী এ কর্মসূচি পালন করে মৌলভীবাজারস্থ বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ।
শুক্রবার (৩ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শ্রীমঙ্গল ও ভানুগাছ রেলওয়ে স্টেশনে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে সিলেটের সাথে ঢাকা ও চট্টগ্রাম রেলপথে দ্রুতগামী ট্রেন চলাচলের সময় নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণি কাটা পড়ে মারা যায়। সেজন্য লাউয়াছড়া বনের মাঝ দিয়ে রেলপথে বন্যপ্রাণি মারা যাওয়ার বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরে বনাঞ্চল এলাকায় ট্রেনের গতি ২০-৩০ কিলোমিটারের রাখার বিষয়ে গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষকের কাছে পত্র প্রেরণ করেন মৌলভীবাজারস্থ বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।
এই পত্রের বরাত দিয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব দীপক কুমার চক্রবর্তী লাউয়াছড়া বনাঞ্চলে বন্যপ্রাণির মৃত্যুরোধে ট্রেনের গতিসীমা ২০ কি.মি. এর মধ্যে রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে গত ২৫ জানুয়ারি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে পত্র প্রেরণ করেন। পরে গত ২৯ জানুয়ারি রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. তৌফিক ইমাম স্বাক্ষরিত মহাপরিচালক বাংলাদেশ রেলওয়ে, ঢাকাকে গতিসীমা ২০ কি.মি. এর মধ্যে রাখার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন।
ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণকরণে বন্যপ্রাণি দিবসে শ্রীমঙ্গল ও ভানুগাছ স্টেশনে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে দাঁড়িয়ে সচেতনতা কর্মসূচি পালিত হয়।
এসময় ভানুগাছ রেলওয়ে স্টেশনে উপস্থিত ছিলেন, মৌলভীবাজারস্থ বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক শ্যামল কুমার মিত্র, লাউয়াছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. সহিদুল ইসলামসহ অনেকে।
বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা গতবছর বিশ্ব বন্যপ্রাণি দিবসে লাউয়াছড়ার বনাঞ্চল এলাকায় সড়ক পথে গাড়ির গতিসীমা সর্বোচ্চ ২০ কি.মি. রাখার জন্য কর্মসূচি পালন করে ছিলাম। এ বছর ট্রেনের গতি সর্বোচ্চ ২০ কি.মি. রাখার জন্য কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। বনের প্রাণিরা নিরাপদে চলার জন্য বনবিভাগ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হলো আমাদের এই নিয়মগুলো কেউ রক্ষা করেন, আবার অনেকেই করেন না। বনের প্রাণীদের প্রতি আমরা সবাই আরও সহানুভূতিশীল হতে হবে।’
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ১৯৯৬ সালে ১ হাজার ২৫০ হেক্টরের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়াকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ থেকে জানা যায় এ উদ্যানে রয়েছে বিশ্বের বিরল এবং বিপন্ন অনেক বৃক্ষ, উদ্ভিদ ও প্রাণীর বাস। উদ্যানে ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভচর, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি এবং ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণি দেখা যায়।