নওগাঁ শহর থেকে আটক করার পর র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিন (৪৫) নামে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের এক কর্মচারীর মৃত্যু হয়েছে।
গত বুধবার (২২ মার্চ) সকাল ১১টার দিকে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় থেকে তাকে আটক করা হয়। এরপর শুক্রবার (২৫ মার্চ) সকাল ৯টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই নারীর মৃত্যু হয়।
সুলতানা জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ভাষ্য, সুলতানা জেসমিনের নামে প্রতারণার অভিযোগ ছিল। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করা হয়েছিল।
সুলতানা জেসমিনের মামা ও নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক (মন্টু) বলেন, আমার ভাগ্নি বুধবার সকালে অফিস করার জন্য বাসা থেকে বের হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুক্তির মোড় থেকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে এসে র্যাবের পোশাক পরা লোকজন তাকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর তাকে কোন র্যাব ক্যাম্পে নেওয়া হলো, সে ব্যাপারে আমরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করতে থাকি। দুপুর ১২টার পর জানতে পারি, সুলতানা নওগাঁ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেখানে গিয়ে দেখি র্যাবের লোকজন সেখানে। ভাগ্নি কোনো কথাবার্তা বলতে পারছিল না। এরপর কিছুক্ষণ পর তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়। শুক্রবার সকালে মৃত্যু হলেও মরদেহ দেওয়া হয় শনিবার দুপুরের পর।
তিনি বলেন, সুলতানার সঙ্গে তার স্বামীর ছাড়াছাড়ি হয় ১৭ বছর আগে। এরপর সে তার এক সন্তানকে অনেক কষ্ট করে অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে লালন-পালন করে আসছিল। নওগাঁ শহরের জনকল্যাণ এলাকায় একটা ভাড়া বাড়িতে থেকে ছেলেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছিল। সে ভূমি অফিসের একজন সামান্য কর্মচারী। কোনোদিন তার বিরদ্ধে কোনো দুর্নীতি কিংবা অনিয়মের অভিযোগ কেউ করতে পারেনি।
রাজশাহী র্যাব-৫ এর কোম্পানি কমান্ডার সিপিএসসি মেজর নাজমুস সাকিব বলেন, সুলতানা জেসমিনের নামে আর্থিক প্রতারণার একটি অভিযোগ পাই। তার ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক টাকা লেনদেনের অভিযোগ ছিল। পরে তার ব্যাংক স্টেটমেন্ট সংগ্রহ করে আমরা অভিযোগের সত্যতা পাই। অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় থেকে র্যাব হেফাজতে নেওয়া হয়। আটক করার পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তৎক্ষণাৎ তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শুক্রবার স্ট্রোক করে তার মৃত্যু হয়। আইনি প্রক্রিয়া শেষে শনিবার দুপুরে স্বজনদের কাছে তার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।
র্যাবের এ কর্মকর্তা আরও জানান, আটক করার পর ওই নারীকে র্যাবের কোনো ক্যাম্পে নেওয়া হয়নি। আটক করার পর পরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর থেকে তার পরিবারের লোকজন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার সঙ্গেই ছিলেন।