রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে বিশ্ব নেতৃত্ব মুখে আশ্বাস দেয় : ড. মোমেন

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বিশ্ব নেতৃত্বের আন্তরিকতার ঘাটতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, তারা মুখে মুখে আশ্বাস দেয়।

শনিবার (২০ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে ‘রোহিঙ্গা রিপ্যাট্রিয়েশন : আ পাথওয়ে টু পিস, স্ট্যাবিলিটি অ্যান্ড হারমোনি ইন দ্য বে অব বেঙ্গল রিজিয়ন’ শীর্ষক সেমিনারে দেওয়া বক্তব্যে বিশ্ব নেতৃত্বের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মন্ত্রী।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যদি প্রতিশ্রুতি থাকে, যদি আন্তরিকতা থাকে তাহলে নিশ্চয় রোহিঙ্গা সংকট দূর হবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বা বৈশ্বিক নেতৃত্ব যে প্রতিশ্রুতি দেয়, তাতে আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত, এ বিষয়ে তারা শুধু মুখে মুখে আশ্বাস দেয়। শুধু আশ্বাস না দিয়ে এ সমস্যা সমাধানে বিশ্ব নেতৃত্বকে এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, তাদের আন্তরিকতা ও অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের আশাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। উন্নত জীবন ও ভবিষ্যতের জন্য রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। আমি আশা করি, এটা একদিন হবে।

মোমেন বলেন, আমরা সর্বদা আশাবাদী। ভালো খবর হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকে সহযোগিতা করছে। চীনও যুক্ত রয়েছে। তারা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য সিনিয়র পর্যায়ের ফোকাল পয়েন্টে নিযুক্ত রয়েছে।

এসময় তিনি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। মোমেন বলেন, গত ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাও ফেরত যায়নি। মিয়ানমার বলেছে, তারা রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাবে। কিন্তু একজন রোহিঙ্গাও ফিরে যায়নি। মিয়ানমার কথা রাখেনি। তাদের আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে। আমরা দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয় এবং বিভিন্ন ফোরামে কূটনৈতিকভাবে এ সমস্যা সমাধানে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

পশ্চিমাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মিয়ানমারে বিনিয়োগের চিত্র তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, পশ্চিমা কিছু কিছু দেশ মিয়ানমারের কিছু জেনারেলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়। কিন্তু তারা সেখানে ঠিকই বিনিয়োগ করে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিঙ্গাপুর, চীন, হংকং, জাপান, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, ফ্রান্স ও ভিয়েতনামের মিয়ানমারে বিনিয়োগ বেড়েছে।

তিনি বলেন, এশিয়া প্যাসিফিক ও বে অব বেঙ্গলের প্রতি অনেক দেশের আকর্ষণ বেড়েছে এবং প্রত্যেকে এখানে অনেক বিনিয়োগ করেছে ও ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াচ্ছে। এ সমস্যার সমাধান না হলে এবং এখানে সন্ত্রাসী তৎপরতা বাড়লে এ বিনিয়োগগুলো ভেস্তে যাবে।

ডিপ্লোম্যাটস ম্যাগাজিন আয়োজিত এ সেমিনার পরিচালনা করেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. মাহফুজুর রহমান।

এতে বক্তব্য দেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও প্রকাশনার নির্বাহী উপদেষ্টা আবুল হাসান চৌধুরী এবং অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ওবায়দুল হক।