হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার রেমা-কালেঙ্গায় বিপন্ন প্রায় মুখপোড়া হনুমানের সন্ধান পাওয়া গেছে।
গেল শনিবার (১ এপ্রিল) সকালে একটি অনুসন্ধানী দল বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে গভীর বনে প্রবেশ করে ভাগ্যক্রমে সন্ধান পায় বিপন্ন প্রায় এই মুখপোড়া হনুমানের।
এই রেমা-কালেঙ্গা অভায়ারণ্যে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তর ফরেস্ট হলেও সাধারণত দুই-একটি বানর দেখা যায়। নানাভাবে পাহাড় উজাড় হওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবে এদের দেখা মেলে না। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বনে ঘোরাঘুরি শেষে হতাশ হয়েও ফিরতে হয়।
সেদিন পড়ন্ত বিকেলে ভাগ্যক্রমে কালেঙ্গা ওয়াচ টাউয়ারের পাশে আসতেই হঠাৎ চাপালিশ গাছে নড়াচড়ার শব্দ শোনা যায়। ঠিক যেন গাছের ডাল ভাঙর শব্দ। উল্লুখ ভেবে প্রথমে ভয় পেলেও পরে দেখা মেলে বিপন্ন মুখপোড়া হনুমানের। এদের ‘লালচে হনুমান’ নামেও ডাকা হয়।
এসময় একে একে মুখপোড়া বানরের বেশ বড় একটি দল বেরিয়ে আসে। ক্যামেরায় ফ্রেমবন্দি করতে চাইলেও সেটা ছিল বেশ কষ্টসাধ্য। তবুও মাত্র একটি হনুমানের ছবি তোলা গেছে।
মুখপোড়া হনুমানের সহজে দেখা পাওয়া যায় না। এরা শুধু লাফিয়ে লাফিয়ে এক গাছ থেকে অন্য গাছে ঘুরে বেড়ায়। পাতার ফাঁক দিয়ে তাদের মুখ দেখতে সত্যিই বেশ বেগ পেতে হয়।
এ দেশে তিন প্রজাতির হনুমানের মধ্যে এদের সংখ্যাই বেশি। বর্তমানে বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বে বিপন্ন প্রাণির তালিকায় আছে।
এক জরিপে জানা যায়, বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের পাতাঝরা বন, হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া এবং চট্টগ্রাম বিভাগের মিশ্র চিরসবুজ বনে মুখপোড়া হনুমানের দেখা মেলে।
এরা বৃক্ষচারী। খাবারও সংগ্রহ করে গাছ থেকে। গাছের কচি পাতা, বোঁটা, কুঁড়ি ও মূল এদের খাবার। তবে বট চালতা, আমড়া, আমলকী, হরতকী, বহেরা তাদের খুব পছন্দ। এ ছাড়া চলাফেরা, ঘুম, খেলা ধুলা, বিশ্রাম, প্রজনন-সবকিছু গাছেই সম্পন্ন করে। শক্তপোক্ত একটি পুরুষের নেতৃত্বে দলের সব স্ত্রী, যুবক বাচ্চা থাকে। এরা শান্তি প্রিয়। দলবদ্ধ এই প্রাণীদের একটি দলে ২ থেকে ১০ জন করে থাকে।
পুরুষ মুখপোড়া হনুমানের দেহ ৬৮-৭০ সেন্টিমিটার এবং লেজ ৯৪-১০৪ সেন্টিমিটার লম্বা। স্ত্রীর মুখপোড়া হনুমানের দেহ ৫৯-৬৭ সেন্টিমিটার ও লেজ ৭৮-৭০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। পুরুষ হনুমানের ওজন ১১ দশমিক ৫ কেজি থেকে ১৪ কেজি এবং স্ত্রী হনুমানের ৯ দশমিক ৫ থেকে ১১ দশমিক ৫ কেজি। মুখপোড়া হনুমানের পিঠ ও শরীরের লোম গাঢ় ধূসর-বাদামি এবং বুক-পেট ও দেহের নিচ লালচে, লালচে বাদামি বা সোনালি রঙের হয়ে থাকে। মুখ, কান, হাত ও পায়ের পাতা কুচকুচে কালো রঙের। মুখে কোনো লোম থাকে না।
রেমা-কালেঙ্গায় ফলজ ঔষুধি গাছের সংখ্যা খুবই নগন্য। নতুন করে গাছ রোপন না করা হলে হনুমানগুলো চরম খাদ্য সংকটে পড়বে। ফলে হারিয়ে যেতে পারে এই বিপন্ন প্রাণী।
এ বিষয়ে রেমা-কালেঙ্গা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, গভীর বনে টহল দেয়ার সময় এদের দেখা মেলে। বাংলাদেশে বিপন্ন হলেও রেমা-কালেঙ্গাতে এদের সংখ্যা মোটামুটি ভালোই আছে। নতুন করে রেমা-কালেঙ্গায় ফলজ গাছ লাগানো হচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি সুফল নামের একটি এনজিও এ বনে কাজ করছে।