রেমালের আঘাতে ৬ জেলায় ৮ জনের মৃত্যু

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলোচ্ছ্বাস। বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ঢুকেছে জোয়ারের পানি। এছাড়া ঝড়ের দাপটে ভেঙে পড়েছে কাঁচা ঘরবাড়ি, দেয়াল ও গাছপালা। এরই মধ্যে পটুয়াখালী, ভোলা, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও কুমিল্লায় অন্তত ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

রোববার (২৬ মে) থেকে সোমবার (২৭ মে) দুপুর পর্যন্ত এসব মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

বরিশাল নগরের রুপাতলী এলাকায় সোমবার (২৭ মে) ভোর ৪টার দিকে একটি ভবনের ছাদের ওপরের নির্মানাধীন দেয়াল ধসে পাশের খাবারের হোটেলের ওপর পড়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- লোকমান হোটেলের মালিক লোকমান ও কর্মী মোকসেদুর রহমান। এ ঘটনায় শাকিব নামে আরও এক হোটেলের কর্মী আহত হয়েছেন। তাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

২৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুলতান মাহমুদ বলেন, ঝড়ো বাতাসে তিনতলা ভবনের ছাদের ওপরের নির্মাণাধীন একটি দেয়াল ধসে পাশের টিনশেড খাবার হোটেলের ওপর পড়ে। এ সময় ওই হোটেলের মালিকসহ দুই কর্মচারী ঘুমিয়ে ছিল। তারা টিনের চাল ও দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক দুইজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

ভোলা
ভোলার লালমোহন উপজেলায় ঘর চাপায় মনেজা খাতুন (৫৪) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার ভোর রাতের দিকে উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড এলাকায় প্রচণ্ড বাতাসে নিজ ঘর ভেঙে পড়লে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এতে ঘটনাস্থলে ওই নারীর মৃত্যু হয়। তার বাবার নাম সিদ্দিক মাঝি। মৃতের পরিবারকে সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।

সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরায় রোববার (২৬ মে) শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে শওকাত মোড়ল (৬৫) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।

মৃত শওকাত মোড়ল গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী গ্রামের মৃত নরিম মোড়লের ছেলে। গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জি.এম মাসুদুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পটুয়াখালী
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে পটুয়াখালীতে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার (২৬ মে) দুপুরে কলাপাড়ায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের হাত থেকে ফুফু ও বোনকে রক্ষা করতে গিয়ে মো. শরীফ (২৭) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মৃত শরীফ অনন্তপাড়া এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শরীফের ফুপু মাতোয়ারা বেগম কাউয়ারচর এলাকায় বসবাস করেন। ওই বাড়িতে তার বোনও ছিল। দুপুর ২টার দিকে অনন্তপাড়া থেকে শরীফ তার বড় ভাই ও ফুফাকে নিয়ে বোন এবং ফুফুকে উদ্ধার করতে যায়। এ সময় সমুদ্রের পানিতে কাউয়ারচর এলাকা ৫ থেকে ৭ ফুট পানিতে প্লাবিত ছিল। সাঁতার কেটে তারা ফুফুর ঘরে যাওয়ার সময় সমুদ্রের ঢেউয়ের তোড়ে শরীফ হারিয়ে যায়। পরে ঘণ্টাখানেক পর ওই স্থান থেকে শরীফের লাশ উদ্ধার করে স্থানীয়রা।

এছাড়া বাউফলে ঝোড়ো হাওয়ায় একটি পরিত্যক্ত টিনশেড দোতালা ঘরচাপায় করিম (৬৫) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। রোববার রাতে ঝড়ের সময় বৃদ্ধ করিম পরিত্যক্ত ওই ঘরে আশ্রয় নেন এবং রাতের যে কোনো সময় ঝোড়ো হাওয়ায় ঘর ভেঙে এ ঘটনা ঘটে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাউফল পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের উপজেলা পরিষদ এলাকার কাছে এ ঘটনা ঘটে।

বৃদ্ধের বাড়ি পটুয়াখালী বাউফলের নাজিরপুর ইউনিয়নের ধানদি গ্রামে। তিনি ভিক্ষা করতেন।

বাউফল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শোনিত কুমার গায়েন বলেন, মরদেহের পরিচয় পাওয়া গেছে। আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।

কুমিল্লা
কুমিল্লা নগরীতে নির্মাণাধীন ৭তলা ভবনের দেওয়াল ধসে সাইফুল ইসলাম সাগর (১২) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৭ মে) বেলা ১১টার দিকে নগরীর শাকতলা এলাকায় নূর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে এ ঘটনা ঘটে। মৃত স্কুলছাত্র সাইফুল ইসলাম সাগর ওই প্রতিষ্ঠানের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। তিনি শাকতলা এলাকার অলী আহমেদের ছেলে।

সদর দক্ষিণ মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) খাদেমুল বাহার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল ধসে এক যুবক মারা গেছেন। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বায়েজিদের চন্দ্রনগর কলাবাগান এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

মৃত যুবকের নাম সাইফুল ইসলাম হৃদয় (২৬)। তিনি নির্মাণাধীন ভবন পাশ দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় ধসে পড়া দেয়ালের চাপা পড়ে। এতেই তার মৃত্যু হয়। বায়েজিদ ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. কামরুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এর আগে রোববার সারাদিন ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে চট্টগ্রামে ৩ ঘণ্টায় ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। এতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।