রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে হেরে গেল বাংলাদেশ

তাসকিনের বোলিংয়ে দুর্দান্ত শুরু হলেও বাকি বোলাররা সেই ছন্দ ধরে রাখতে পারেননি। বাকিদের বোলিং ব্যর্থতায় বাংলাদেশকে ১৮৫ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েছিল ভারত। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে লিটন কুমার দাসের ঝড়ো তাণ্ডবে উড়ন্ত সূচনা পেয়েছিল বাংলাদেশ।

তবে এরপর বৃষ্টি-বাধায় খেলা বন্ধ হলে মোমেন্টাম হারিয়ে ফেলে টাইগাররা। বৃষ্টি থামার পর নতুন লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৪২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। তবে এরপর ব্যাট হাতে লড়াই করেছিলেন তাসকিন আহমেদ ও নুরুল হাসান সোহান। কিন্তু তাদের লড়াই শেষ পর্যন্ত পর্যাপ্ত হয়নি, ভারতের বিপক্ষে এ ম্যাচে পাঁচ রানে হেরেছে টাইগাররা।

টস জিতে ভারতের বিপক্ষে বোলিং করতে নেমে দুর্দান্ত শুরু করেছিল বাংলাদেশ। তাসকিনের দুরন্ত বোলিংয়ে রান তুলতেই হিমশিম খাচ্ছিলেন ভারতীয় ওপেনাররা। প্রথম তিন ওভারে ভারতের স্কোরবোর্ডে জমা হয় মাত্র ১০ রান।

এরপর ইনিংসের তৃতীয় ওভারে ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে ফিরিয়ে দেওয়ার দারুণ সুযোগ পেয়েছিল টাইগাররা। তবে ওভারের চতুর্থ বলে ফাইন লেগে রোহিত সহজ ক্যাচ ফেলেন পেসার হাসান মাহমুদ।

তবে ক্যাচ মিসের ক্ষত বেশিক্ষণ বইতে হয়নি বাংলাদেশকে। পরের ওভারে বোলিনংয়ে এসে নিজেই রোহিতকে আউট করে ক্যাচ মিসের আক্ষেপ মিটিয়েছেন হাসান। এবার ওভারের দ্বিতীয় বলে পয়েন্টে রোহিতের ক্যাচ নিয়েছেন ইয়াসির আলি।

এরপর ব্যাট হাতে কিছুটা আক্রমণ চালানোর চেষ্টা করেন তিন নম্বরে নামা বিরাট কোহলি ও আরেক ওপেনার কে এল রাহুল। তাতেই পাওয়ার প্লের শেষ তিন ওভারে স্কোরবোর্ডে যোগ হয় ২৭ রান। সব মিলিয়ে এক উইকেট হারিয়ে ৬ ওভার শেষে এক উইকেট হারিয়ে ৩৭ রান তোলে ভারত।

প্রথম সাত ওভারের মধ্যে বল হাতে আগুন ঝড়ানো তাসকিনের চার ওভার শেষ করে ফেলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। উইকেট না পেলেও চার ওভারে মাত্র ১৫ রান দিয়ে টাইগারদের দুরন্ত শুরু এনে দেন এই ডানহাতি পেসার।

অষ্টম ওভারে এসে ব্যয়বহুল ওভার করে ভারতে ওভার থেকে চাপ কমিয়ে দেন শরিফুল ইসমাম। ওই ওভারেই ভারত তুল নেয় ২৭ রান। তবে ইনিংসের নবম ওভারে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা রাহুলকে ফেরান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। শর্ট ফাইন লেগে মোস্তাফিজুর রহমানের ক্যাচ হয়ে ফেরার আগে ৩২ বলে তিন চার ও চার ছক্কায় ৫০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন তিনি।

ইনিংসের ১২তম ওভারে বোলিংয়ে এসে ভারতীয় ব্যাটার সূর্যকুমার যাদবকে ফেরানোর সুযোগ তৈরি করেছিলেন সাকিব। তবে উইকেটের পিছনে ওঠা কঠিন ক্যাচ নিতে পারেননি মোস্তাফিজুর রহমান। একই ওভারের পঞ্চম ওভারে আবারও জীবন পান সূর্য। এবার ক্যাচ পড়ে উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভস থেকে।

চার নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে শুরু থেকেই আক্রমণ শুরু করেন সূর্য। সাকিবের আগের ওভারে দুইবার সুযোগ পাওয়া সূর্য ফেরেন সাকিবের ওভারেই। ইনিংসের ১৪তম ওভারে দারুণ আর্মার ডেলিভারিতে সূর্যকে বোল্ড করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। যাওয়ার আগে ১৬ বলে ৩০ রানের ইনিংস আসে সুর্যের ব্যাট থেকে।

এরপর ব্যাটিংয়ে খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি হার্দিক পান্ডিয়া। ইনিংসের ১৬তম ওভারের প্রথম বলে দলীয় ১৩০ রানে হার্দিককে পয়েন্টে ইয়াসিরের ক্যাচ বানিয়ে ফিরিয়ে দেন ডানহাতি পেসার হাসান মাহমুদ। তবে অন্যপ্রান্তে দারুণ গতিতে রানের চাকা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন কোহলি।

১৭তম ওভারের শেষ বলে রান আউট হয়ে ফেরেন দীনেশ কার্তিক। লং অফ থেকে সাকিবের থ্রো ধরে কার্তিককে রানআউট করেন শরিফুল ইসলাম। এরপর ১৯তম ওভারে এসেই প্রথম বলে অক্ষর প্যাটেলকে ফিরিয়ে ম্যাচে নিজের তৃতীয় উইকেট শিকার করেন হাসান মাহমুদ।

ওই ওভারের শেষ দুই বলে চার ও ছক্কা মেরে ভারতকে বড় রানের দিকে এগিয়ে নেন কোহলি। শেষ ওভারে দারুণ চার ও ছক্কা মেরে ভারতের রানকে আরও উপরে নিয়ে যান ভারতীয় ব্যাটার রবীচন্দ্রন অশ্বীন। শেষ পর্যন্ত কোহলির ৪৪ বলে আট চার ও এক ছক্কায় ৬৪ রানের ইনিংসে ছয় উইকেট হারিয়ে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ১৮৪ রানের সংগ্রহ পায় ভারত।

বড় রান তাড়া করতে নেমে লিটন কুমার দাসের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ঝড়ো শুরু পায় বাংলাদেশ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে আর্শ্বদীপের সিংয়ে ওভার থেকে ১২ রান নেওয়ার পর তৃতীয় ওভার করা ভুবনেশ্বর কুমারের ওভার থেকে তুলে নেন আরও ১৫ রান।

তবে লিটন একপ্রান্ত থেকে ব্যাট হাতে আক্রমণ করলেও অন্যপ্রান্তে রান করতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিলেন আরেক ওপেনার নাজমুল হোসাইন শান্ত। তবে আরেক প্রান্তে লিটন ঠিকই রানের গতি বাড়িয়ে নিয়েছেন।

মাত্র ২১ বলে ফিফটি করা লিটনের ব্যাটিং তাণ্ডবে পাওয়ার প্লের ছয় ওভারেই টাইগারদের স্কোরবোর্ডে জমা হয় ৬০ রান। ৩৩ ইনিংস পর টি-টোয়েন্টিতে পঞ্চাশ রানের ওপেনিং জুটি পায় বাংলাদেশ। সপ্তম ওভারে মাত্র ছয় রান আসার পর বৃষ্টি বাঁধায় খেলা বন্ধ হয়ে যায়।

বৃষ্টি থামলে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৬ ওভারে ১৫১ রান। ব্যাট হাতে ঝড় তোলা লিটনকে নতুন করে খেলা শুরু হওয়ার পরপরই হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। ভারতীয় ফিল্ডার কে এল রাহুলের দুর্দান্ত থ্রোতে রান আউট হয়ে ২৭ বলে ৬০ রান করে ফিরে যান লিটন।

লিটন যাওয়ার পর ব্যাট হাতে আক্রমণ শুরু করেছিলেন শান্ত। তবে তাকে দ্রুতই ফিরিয়ে দেন মোহাম্মদ শামী। দলীয় ৮৪ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় টাইগাররা। এরপর ব্যাট হাতে রান তুলতেই হিমশিম খাচ্ছিলেন সাকিব ও চারে নামা আফিফ হোসাইন।

শেষ পাঁচ ওভারে জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৫২ রান। ইনিংসের ১২তম ওভারে আউট হয়ে বাংলাদেশের বিপদ আরও বাড়িয়ে দিয়ে যান আফিফ হোসাইন। তিন বলের ব্যবধানে ফিরে যান অধিনায়ক সাকিবও।

পরের ওভারে ইয়াসিরকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের হার প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেন ভারতীয় অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া। এরপর ব্যাটিংয়ে এসে প্রথম বলে ছয় হাঁকালেও এক বলের ব্যবধানে মোসাদ্দেককেও বোল্ড করে ফিরিয়ে দেন হার্দিক।

দুই ওভারে ৩২ রান প্রয়োজন ছিল। ১৫তম ওভারে এক চার ও এক ছক্কায় তাসকিন ম্যাচ জমিয়ে দিলেও সোহান ব্যর্থ হওয়ায় শেষ ওভারে সমীকরণ দাঁড়ায় ২০ রানের। তবে শেষ পর্যন্ত জয় ছিনিয়ে আনতে পারেনি বাংলাদেশ।