রাশিয়ার ৪ মাসের ‘সাফল্য’ ৪ দিনে ‘ধূলিসাৎ’ করলো ইউক্রেন

পূর্বাঞ্চলীয় খারকিভে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর পাল্টা আক্রমণের গতি খুব ভয়ঙ্কর কিছু নয়। ত্রিশটির বেশি শহর ও গ্রাম দখলদার রুশবাহিনীর কাছ থেকে মুক্ত করা হয়েছে। এসব এলাকা থেকে রুশ সেনারা আরও পূর্বদিকে পালিয়েছে। রুশরা তেমন কোনও বা একেবারেই প্রতিরোধের চেষ্টা করেনি। এমনটিই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

জার্মানির ইউনিভার্সিটির অব ব্রেমেন-এর রাশিয়া বিশেষজ্ঞ নিকোলায় মিত্রোখিন বলেন, ব্যাপক হতাহতের পর চার মাসে রাশিয়ার সেনাবাহিনী ইউক্রেনে যে সাফল্য অর্জন করেছিল মাত্র চারদিনে ইউক্রেন তা ধূলিসাৎ করে দিয়েছে।

তবে যে গতিতে ও সহজভাবে রুশ সীমান্তের পশ্চিমে ও বিচ্ছিন্নতাবাদী লুহানস্কের উত্তরের এলাকাটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ইউক্রেন তাতে রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতা ও পরিকল্পনা নিয়ে অনেক প্রশ্ন জাগছে।

খারকিভ থেকে প্রকাশিত ভিডিও এবং ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর প্রতিবেদন অনুসারে, রুশ সেনারা তাদের কামান বা সাঁজোয়া যান খুব একটা রেখে যায়নি। ব্যাপক নিরাপত্তায় সুরক্ষিত এলাকা থেকে তাদের চলে যাওয়া কোনও তুমুল লড়াইয়ের পর আতঙ্কে পলায়ন নয়।

দখলকৃত কুপিয়ানস্ক ও ইজিউম থেকে রুশ সীমান্তে যাওয়ার মাত্র একটি সংকীর্ণ সড়ক রয়েছে।

মিত্রোখিন বলেছেন, কিন্তু সংকীর্ণ সড়ক রুশদের সেনা প্রত্যাহার আটকে দেয়নি। এটি কয়েক ঘণ্টা নয়, অন্তত কয়েক দিনে হয়েছে।

তিনি মনে করেন, এতে ক্রেমলিনের একটি ইচ্ছাকৃত সিদ্ধান্তের গুরুত্ব তুলে ধরছে। তারা এলাকাটি ছেড়ে এখানকার মানবশক্তি ও অস্ত্র কাছের বিচ্ছিন্নতাবাদী এলাকায় কাজে লাগাতে চাইছে।

মিত্রোখিন বলেন, রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মনে হচ্ছে এটি ওপর মহল থেকে নেওয়া। এই সিদ্ধান্ত হতে পারে খারকিভ থেকে রাশিয়ার সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহার করা এবং সম্ভাব্য সেনা ও অস্ত্র ডনেস্ক এবং সম্ভবত লুহানস্ক সীমান্তে অবস্থান শক্তিশালী করতে ব্যবহার করা হবে।

তিনি আরও বলেন, কিন্তু এর ফলে যা ঘটলো তা হলো এপ্রিলে ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চল থেকে রাশিয়ার সেনা প্রত্যাহারের পুনরাবৃত্তি।

এপ্রিলে কিয়েভসহ ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল থেকে ‘শুভেচ্ছার নিদর্শন’ হিসেবে নিজেদের সেনা প্রত্যাহার করেছিল মস্কো। তবে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকরা বলেছিলেন, ভুল পরিকল্পনা এবং সেনা ও সামরিক সরঞ্জাবে বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতির কারণে রাশিয়া পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল।

প্রশ্নবিদ্ধ রুশ সেনাদের প্রশিক্ষণ

অপর বিশ্লেষকরা মিত্রোখিনের পর্যালোচনার সঙ্গে একমত নন। অনেকে মনে করেন, রাশিয়ার অল্প প্রশিক্ষিত ন্যাশনাল গার্ডসম্যান ও রণক্ষেত্রে বেসামরিকদের বাধ্য করে মোতায়েনের পর এই প্রত্যাহার করা হলো।

দৈনিক পত্রিকা নভোয়া গাজেতাতে এক নিবন্ধে রশ প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ইউরি ফিয়োদোরভ বলেন, এদের বেশিরভাগের প্রশিক্ষণ খুব দুর্বল। তাদের কোনও লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা নেই। অনেক সময় কী ঘটছে তা সম্পর্কে তাদের কোনও ধারণাই ছিল না। ফলে তারা কেন নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিতে যাবে।

রাশিয়ার কারাগার মনিটরিং করা একটি মানবাধিকার সংস্থা রাস সিদিয়াসচায়া-এর ওলগা রোমানভা ফেসবুকে লিখেছেন, ইউক্রেনে লড়াইয়ের জন্য ইতোমধ্যে সাত থেকে ১০ হাজার দণ্ডপ্রাপ্তকে রিক্রুট করা হয়েছে।

তিনি আরও লিখেছেন, শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের ভুল পরিকল্পনার ফলে তারা খারকিভে সেনা সমাবেশ ঘটায়নি এবং সেখানে থাকা বাহিনীর সহযোগিতায় অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনে ব্যর্থ হয়েছে।

কুখ্যাত বেসরকারি ভাড়াটে যোদ্ধা গোষ্ঠীর সাবেক রুশ ভাড়াটে যোদ্ধা মারাত গাবিদুলিন বলছেন, এই সেনা প্রত্যাহার রাশিয়ার শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের গভীর সমস্যার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এতে দেখা যাচ্ছে আমাদের জেনারেলরা কীভাবে বাস্তবতার সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন এবং প্রতিরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় দুর্বল ইউনিট মোতায়েন করে অপেশাদারিত্বের প্রমাণ দিচ্ছেন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মিত্র হিসেবে পরিচিত চেচেন নেতা রমজান কাদিরভও সমালোচনা করেছেন। উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনে নিজেদের প্রধান ঘাঁটি থেকে রুশ বাহিনীর পিছু হটার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘আজ বা কাল যদি বিশেষ সামরিক অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিবর্তন করা না হয়, তাহলে আমি দেশের নেতৃত্বের কাছে যেতে বাধ্য হবো, যাতে তাদের কাছে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা যায়।’

সূত্র: আল জাজিরা