বাগেরহাটের রামপালে ভারত-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিটের উদ্বোধন করেছেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি। একই অনুষ্ঠানে রূপসা রেল সেতুও উদ্বোধন করা হয়েছে।
শেখ হাসিনার ভারত সফরের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে দুই সরকারপ্রধানের যৌথ বৈঠকের দিন এই প্রকল্প দুটি উদ্বোধন করা হয় বলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি এক টুইট বার্তায় বলেছেন।
যদিও রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের জনসংযোগ কর্মকর্তা আনোয়ারুল আজিম বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে রামপালের প্রথম ইউনিটের কাজ শেষ হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। একই সঙ্গে তিনি এটাও জানিয়েছেন যে রামপালের প্রথম ইউনিটকে জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সংযোগ করা হয়েছে। কিন্তু উদ্বোধনের ঘোষণা আসেনি।’
বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট (রামপাল) এর আওতায় নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে দুই ইউনিটে ৬৬০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়ার কথা।
কেন্দ্রটির মূল অবকাঠামো নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেড (বিএইচইএল) নামের ভারতীয় একটি রাষ্ট্রীয় সংস্থা। দেশটির এনটিপিসি লিমিটেড ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যে আধাআধি অংশীদারত্বে এ প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালে।
২০১০ সালে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ভূমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে। এর দুই বছর পর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় নির্মাণকাজ। শুরু থেকেই পরিবেশবাদীরা ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণের বিরোধিতা করছেন।
১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ ব্যয়ের দেড় শ কোটি ডলারের বড় অংশের জোগান দিচ্ছে ভারতের এক্সিম ব্যাংক। প্রকল্পটির নাম ‘মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট’।
অন্যদিকে ভারত সরকারের ঋণে খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত রূপসা নদীতে রেল সেতু নির্মাণের কাজ এ বছরের জুলাইয়ে শেষ হয়েছে। এই সেতুর ফলে খুলনা থেকে মোংলার পথে পণ্য পরিবহনে বেশ সুবিধা মিলবে।
সংযোগ রেললাইনসহ এই সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার হলেও মূল রেল সেতুর দৈর্ঘ্য ৭১৬ মিটার। স্টিলের তৈরি এ সেতুর নির্মাণসামগ্রী ভারত থেকে সড়ক, সমুদ্র ও অভ্যন্তরীণ নদীপথে আমদানি করা হয়।
বাংলাদেশের সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের জন্য নির্মাণসামগ্রী ও যন্ত্রপাতি হস্তান্তর, খুলনা-দর্শনা রেলপথ এবং পার্বতীপুর-দর্শনা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পেরও উদ্বোধন ঘোষণা করেন দুই প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠক শেষে কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন, বাংলাদেশ রেলের আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং মহাকাশ গবেষণাসহ সাতটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। বাংলাদেশের বহুল প্রতীক্ষিত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি না হলেও দুই সরকারপ্রধান আশা প্রকাশ করেন, অচিরেই এই সমস্যার সমাধান হবে।