রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের বাংলাদেশ সফর যেমন ছিলো

ব্রিটিশ রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ তার অসাধারণ জীবন ও শাসনামলে ২ বার বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। প্রথম বার বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে, ১৯৬১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি রাজকীয় সফরে ঢাকায় এসেছিলেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। সে সময় তিনি ঢাকার সুগন্ধা স্টেট গেস্ট হাউজে অবস্থান করেন। এই সফরে আদমজী জুট মিল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন রানি।

১৯৮৩ সালে দ্বিতীয় বার ৪ দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন তিনি। ১৯৮৩ সালের ১৪ নভেম্বর ঢাকায় আসেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তাকে শুভেচ্ছা জানান তৎকালীন প্রেডিসডেন্ট হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ। রানীকে শুভেচ্ছা জানাতে থেকে ১৮ মাইল পথ সারিবদ্ধভাবে রাণীর রঙিন পোস্টার, ‘বাংলাদেশ-ইউনাইটেড কিংডম বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবী হোক’ লেখা ব্যানার এবং ইউনিয়ন জ্যাক পতাকা সাজানো ছিলো।

এরপর রানীকে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে গার্ড আব অনার প্রদান করা হয়।

রাজকীয় সফরের সময় তিনি চট্টগ্রামের একটি মডেল গ্রাম ও গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বৈরাগীরচালায় যাওয়ার জন্য ট্রেনে ভ্রমণ করেছিলেন। চট্রগ্রামে তিনি চাল থেকে ‘মুড়ি’ তৈরী করার হয় তা দেখেছিলেন। এছাড়াও হস্তশিল্প, সোনার চাদর এবং মাটির পাত্র সহ বিভিন্ন কারুশিল্প রানীকে মুগ্ধ করে ছিলো।

এদিকে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ট্রেনে করে ঢাকা থেকে শ্রীপুরে এবং পরে গাড়িতে করে বৈরাগীরচালায়ও যান। রানীর সফর সঙ্গী হিসেবে ছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ ও আরও অনেকে। রানির সফরকে কেন্দ্র করে ওই সময় গ্রামটিতে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছিল।

রানীর ভ্রমণকে কেন্দ্র করে তার ভ্রমণের ট্রেনটি ফুল দিয়ে সাজিয়েছিলো বাংলাদেশ রেলওয়ে। এছাড়াও রানীকে মেটাল রিলিফ এবং স্ক্রলিং লিফ বর্ডার সহ একটি কাঠের ফলক উপহার দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। সরকার তার সম্মানে ১০ টাকার পোস্টাল স্ট্যাম্পও প্রকাশ করেছে।

রাণীর ভ্রমণের উল্লেখযোগ্য স্থানগুলোর মধ্যে ছিল জাতীয় স্মৃতিসৌধ, যেখানে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার লড়াইয়ে নিহতদের সম্মানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছিলেন।

এছাড়াও রানী এবং প্রিন্স ফিলিপ ঢাকায় ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন এবং চিকিৎসা পরিচালক ডাঃ সুলতানা খানমের সাথে সাথে সুবিধাভোগীদের সাথে দেখা করেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে রাণী বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তার শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমরা বন্ধুত্ব এবং স্নেহের বন্ধন ভাগ করি, যা আমাদের অংশীদারিত্বের ভিত্তি হিসাবে রয়ে গেছে এবং এটি পঞ্চাশ বছর আগের মতো আজও গুরুত্বপূর্ণ।

উল্লেখ্য, স্কটল্যান্ডের ব্যালমোরাল ক্যাসেলে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি এই রানি ৯৬ বছর বয়সে মারা গেছেন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার পর রানির মৃত্যুর ঘোষণা দেয় বাকিংহাম প্যালেস।