আগামী ২৯ অক্টোবর সুনামগঞ্জবাসীর স্বপ্নের রানীগঞ্জ সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রতিদিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী কুশিয়ারা নদীর তীরে এই সেতু দেখার জন্য ভিড় করছেন। খরস্রোতা কুশিয়ারা নদীর অভূতপূর্ব দৃশ্য অবলোকনে এ সেতু দর্শনার্থীদের অন্যতম আকর্ষণ। একদিকে সেতুর সৌন্দর্য যেমন দৃষ্টি কাড়ছে, অন্যদিকে কুশিয়ারার স্বচ্ছ জলরাশিও টানছে সবার মন।
কুশিয়ারা সেতু উদ্বোধনের খবর শুনে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সুনামগঞ্জের জনসাধারণ। তারা বলছেন, কুশিয়ারা নদীর ভাঙনে বাপ-দাদার ভিটেমাটি হারিয়ে শুরুতে কষ্টে থাকলেও এখন আমরা অনেক খুশি ও গর্ববোধ করছি। স্বাধীনতার পর আমাদের স্বপ্ন ছিল কুশিয়ারা নদীর উপর দিয়ে রাজধানী ঢাকায় যাওয়া-আসা করবো। এখন আর সেটা স্বপ্ন নয়, বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।
ইট-পাথরের নগর জীবন থেকে মুক্ত পরিবেশে কুশিয়ারা নদীর পাড়ে এ সেতুর সৌন্দর্য অবলোকন করতে রানীগঞ্জ সেতুর দক্ষিণ পাড় ও উত্তর পাড়ে সেতুর আশপাশের এলাকায় প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের ভিড় যেন মিলনমেলায় রূপ নেয়।
পরিবার নিয়ে আসা সুনামগঞ্জের প্রভাব দেবনাথ বলেন, স্বপ্নের রানীগঞ্জ সেতু শুধু যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তনই আনবে না, সেই সাথে এটি ঘিরে পর্যটন শিল্পের বিশাল এক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর পাড়ে নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলার ছোটাছুটি যে কাউকে আকৃষ্ট করে। এখানে আসার এক্সপ্রেসওয়ে সড়কটিও অসাধারণ।
জগন্নাথপুর থেকে ঘুরতে আসা জামাল উদ্দিন বেলাল বলেন, গণমাধ্যমে প্রতিদিনই রানীগঞ্জ সেতুর খবর পাই। আজ বাস্তবে দেখার জন্য সকালেই ছুটে এসেছি পরিবার নিয়ে। সেতুর উপরে উঠতে পারলে খুব ভালো লাগতো। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে কাউকে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না।
জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক রেজাউর করিম রিজু বলেন, আমরা শুনেছি আগামী ২৯ অক্টোবর সেতু উদ্বোধন হবে। আমাদের দীর্ঘ দিনের স্বপ্নের সেতু এভাবে উদ্ধোধন হবে মেনে নিতে পারছি না। বর্তমান সময়ে আমরা নৌকা নিয়ে নির্বাচনেড় মাঠে কাজ করছি। এখনও একটি পথসভায় আছি। আমাদের ইচ্ছা ছিল জাঁকজমকভাবে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বড় আয়োজন করে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করবো। কিন্তু এটা আর করা হলো না। তারপরও চেষ্টা করবো সবাইকে নিয়ে আমাদের স্বপ্নের সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সুনামগঞ্জ জেলার নির্বাহী প্রকোশলী মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, আগামী ২৯ অক্টোবর আমাদের জেলায় এক সাথে কয়েকটি সেতুর উদ্বোধন হবে। স্বল্প আকারে রানীগঞ্জ সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। সেতু উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আমরা চেষ্টা করবো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজন করার।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী, বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ৭০২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০.২৫ মিটার বক্স গার্ডারের সেতুটি দেড়শ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে। সেতুটি চালুর পর সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকার দূরত্ব কমবে ৮০ কিলোমিটার। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে এমএম বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড।