রাত ৮টার মধ্যে দোকান বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপ

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে আজ সোমবার (২০ জুন) রাত ৮টার মধ্যে সারাদেশে দোকান, বিপণিবিতান, শপিংমলগুলো বন্ধের বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সবাই যেন ৮টার মধ্যে দোকান বন্ধ করে দেন, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে দোকান ও শপিংমল কর্তৃপক্ষকে জানানো হচ্ছে। শপিংমল, দোকানপাট বন্ধের বিষয়গুলো মনিটরিং করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

সার্বিক বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে সরকার বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ১১৪ কঠোরভাবে প্রতিপালনের উদ্যোগ নিয়েছে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি, এফবিসিসিআইসহ সব ব্যবসায়ী সংগঠন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার প্রতি সম্মান জানিয়ে সরকারের এ উদ্যোগ সর্বসম্মতিক্রমে মেনে নিয়েছেন।

রাজধানীসহ সারাদেশে বিভাগীয় শহর ছাড়াও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আজ ৮টার মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হবে বিভিন্ন দোকান ও শপিংমল। অপরাধী নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসব বিষয় প্রতিপালন করতে সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে সরকারি নির্দেশনা তারা পেয়েছেন এবং সে অনুযায়ী কর্তৃপক্ষকে সচেতন করার চেষ্টা করছেন। কর্মকর্তারা বলছেন, আগেও রাত ৮টার মধ্যে শপিংমল ও বিভিন্ন দোকান বন্ধের নির্দেশনা ছিল, কিন্তু বন্ধ করতে করতে ৯টা- সাড়ে ৯টা বাজিয়ে দিতো। কিন্তু আজ থেকে রাত ৮টার মধ্যে দোকান ও শপিংমল বন্ধ করে দিতে হবে। আমরা প্রাথমিকভাবে দোকান মালিক এবং শপিংমল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের বোঝানো হচ্ছে। সিভিল প্রশাসন নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে এসব বিষয় মনিটরিং করা হবে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, অপরাধী ধরতে অভিযান, বিভিন্ন আন্দোলন দমন—এসব নিয়েই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রতিনিয়ত ব্যস্ত থাকতে হয়। এছাড়া সরকারি বিভিন্ন নির্দেশনা আসলে তা বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে থাকি। তারই ধারাবাহিকতায় রাত ৮টার মধ্যে সারাদেশে দোকান এবং শপিংমলগুলো বন্ধের নির্দেশনার আলোকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। তাদের সচেতন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারা যেন সরকারি নির্দেশনা মেনে নির্ধারিত সময়ে দোকান ও শপিংমলগুলো বন্ধ করে দেন, সেই অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। বাড়তি দায়িত্ব হলেও সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী যেকোনও ধরনের কাজ করে যাচ্ছে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা।

ময়মনসিংহ জেলার পুলিশ সুপার আহমদউজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনায় রাত ৮টার মধ্যে শপিং মল ও দোকানপাট বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য সিভিল প্রশাসনের সঙ্গে আমরা কাজ করবো। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা থাকবেন এবং সংশ্লিষ্ট থানার মোবাইল টিমগুলো একযোগে কাজ করবে। প্রথমত কিছু নির্দেশনা মেনে চলতে হয়, প্রয়োগ করার চেয়ে মেনে চলা বেশি জরুরি। বিশেষ করে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, তাদের সচেতন করার চেষ্টা করছি।’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপি উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার তাপস কুমার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সব থানার বিট অফিসারকে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট শপিংমল এবং দোকানপাটের ব্যবসায়ী ও মালিকদের সঙ্গে কথা বলতে বলা হচ্ছে। তারা যেন রাত ৮টার মধ্যে বন্ধ করে দেন সে বিষয়গুলো আমরা মনিটরিং করছি।’

ডিএমপি মিরপুর বিভাগের শাহ আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার থানা এলাকার শপিংমল ও দোকানে গিয়ে ব্যবসায়ী এবং মালিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে রাত ৮টার মধ্যে দোকান বন্ধের বিষয়টি জানাচ্ছি। সরকারি নির্দেশনা মানার পাশাপাশি সচেতনতার জন্য কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছেন।’

ডিএমপি গুলশান বিভাগের গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাত ৮টার মধ্যে দোকানপাট ও শপিংমল বন্ধের নির্দেশনাটি আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছি। ৮টার পর শপিংমলগুলো যেন খোলা না থাকে, সে অনুযায়ী কাজ করছি। এসব বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

বগুড়া জেলার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বগুড়া জেলার বিভিন্ন থানা ও উপজেলার শপিংমলগুলো এবং দোকানপাট রাত ৮টার মধ্যে বন্ধ করার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সচেতন করা হচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় জেলা প্রশাসনও কাজ করছে।’

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সরকারের নির্দেশনা মেনে নিয়েছি। তবে দাবি, ঈদুল আজহার কারণে ১ জুলাই থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত মার্কেটগুলো রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখার অনুমতি দিতে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা দাবি জানিয়েছি, তিনি সিদ্ধান্ত জানাবেন। রাত ৮টার মধ্যে শপিংমল ও দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়ার জন্য সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় মুদি দোকান রয়েছে, সেগুলো যেন খোলা রাখার ব্যবস্থা করা হয়, সে দাবি আমরা জানিয়েছি। এছাড়া আমরা ঈদের পর দুপুর ১২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলা রাখার দাবি জানাবো। যেহেতু এটি করা হয়েছে জ্বালানি সাশ্রয় ও যানজট নিরসনের জন্য। দুপুর ১২টায় শপিংমলগুলো খোলা হলে সকালের যানজট অনেকটাই এড়ানো সম্ভব হবে। এতে করে জ্বালানি সাশ্রয় হবে। এছাড়া সন্ধ্যায় যানজট নিরসনে অনেকটাই কার্যকর ভূমিকা রাখবে।’

যা খোলা থাকবে

(ক) ডক, জেটি, স্টেশন অথবা বিমান বন্দর এবং পরিবহন সার্ভিস টার্মিনাল অফিস।

(খ) তরি-তরকারি, মাংস, মাছ, দুধ জাতীয় সামগ্রী, রুটি, পেস্ট্রি, মিষ্টি ও ফুল বিক্রির দোকান।

(গ) ওষুধ, অপারেশন সরঞ্জাম, ব্যান্ডেজ অথবা চিকিৎসা-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান।

(ঘ) দাফন ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রির দোকান।

(ঙ) তামাক, সিগারেট, পান-বিড়ি, বরফ, খবরের কাগজ, সাময়িকী বিক্রির দোকান এবং দোকানে বসে খাওয়ার জন্য (হালকা) নাশতা বিক্রির খুচরা দোকান।

(চ) খুচরা পেট্রোল বিক্রির জন্য পেট্রোল পাম্প এবং মেরামত কারখানা নয় এমন মোটরগাড়ির সার্ভিস স্টেশন।

(ছ) নাপিত ও কেশ প্রসাধনীর দোকান।

(জ) যেকোনও ময়লা নিষ্কাশন অথবা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।

(ঝ) যেকোনও শিল্প, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যা জনগণকে শক্তি, আলো-অথবা পানি সরবরাহ করে; তবে শর্ত রয়েছে, একই দোকানে অথবা বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানে যদি একাধিক ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালিত হয়।

(ঞ) ক্লাব, হোটেল, রেস্তোরাঁ, খাবার দোকান, সিনেমা অথবা থিয়েটার।