শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। পদত্যাগে সম্মতির কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেও। এর আগে বিক্ষোভকারীরা তার সরকারি বাড়িতে ঢুকে পড়ে আর প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তবে ওই সময়ে প্রেসিডেন্ট কিংবা প্রধানমন্ত্রী কেউই বাড়িতে ছিলেন না।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র প্রতিনিধি আনবারাসান এথিরাজন এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, রাজপাকসে পরিবার দীর্ঘদিন ক্ষমতা নিজেদের কুক্ষিগত করে রাখলেও এবার লঙ্কান জনগণ সেই নিয়ন্ত্রণ গুড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিবেদনটি ভাষান্তর করে তুলে ধরা হলো-
এই সময়টি শ্রীলঙ্কার জন্য একটি বিস্ময়কর মুহূর্ত। ক্ষোভ ও সহিংসতার একটি দিনের পর, দেশটির দুজন সিনিয়র নেতা পদত্যাগে রাজি হয়েছেন।
কলম্বোতে বিক্ষোভের প্রাণকেন্দ্রগুলোতে এই খবর আনন্দ ও উচ্ছ্বাস বয়ে এনেছে। শহরের বিভিন্ন অংশে পোড়ানো হয় আতশবাজি।
খবরটি শোনার কিছুক্ষণের মধ্যে একটি বিক্ষোভস্থল গল ফেস থেকে অনেকেই বাড়ি ফিরতে শুরু করেন। তবু সেখানে ছিলেন কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী। কেউ কেউ গান গাইছিলেন আবার কেউ বাদ্যযন্ত্র বাজাচ্ছিলেন–উদযাপন করছিলেন সবাই।
চরম নাটকীয়তায় ভরপুর ঘটনাবলী। কয়েকদিন আগে পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে ও প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহ হাস্যোজ্জ্বল ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে।
ছবিটি নিয়ে অনেক মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলছিলেন, যখন দেশের লাখো মানুষ তিন বেলা খাবার খেতে সংকটে রয়েছে এই দুই ব্যক্তি খুব খুশিতে আছেন। কিন্তু রাজনীতিতে এক সপ্তাহ অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় হয়ে যেতে পারে।
কয়েক মাস ধরে চলমান বিক্ষোভের প্রধান দাবি ছিল প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের পদত্যাগ। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি এবং কর্তৃপক্ষ খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধ আমদানিতে হিমশিম খাওয়ায় পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে।
শ্রীলঙ্কা বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে জরুরি ঋণ চেয়েছে।
প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসেকে তার ক্ষমতার চূড়ায় দেখেছে আমি। তিনি ছিলেন একজন নির্দয় ও ভয় জাগানিয়া ব্যক্তি ছিলেন। সাংবাদিকসহ কেউ-ই তার ক্ষোভের মুখে পড়তে রাজি ছিলেন না।
ক্ষমতাসীনদের কট্টর সমালোচকদের হয় ভয়াবহ মারধর কিংবা গুম করা হয়েছে। যদিও প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে এবং তার ভাই ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে সবসময় সহিংসতা বা গুমের ঘটনায় তাদের ভূমিকা অস্বীকার করে আসছেন।
এখন প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে নাটকীয়তার মধ্যে নিরাপদে নিজের সরকারি বাসভবন ছেড়ে পালিয়েছেন। কয়েক মাস আগেও এমনটি কল্পনা করা যায়নি। দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সিনহালা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সমর্থন রয়েছে তার প্রতি। ২০০৯ সালে বিচ্ছিন্নতাবাদী তামিল টাইগারদের নিশ্চিহ্ন করতে সামরিক অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি এই সমর্থন আদায় করেন।
রাজপাকসে ভাইদের যুদ্ধের নায়ক হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হতো। কিন্তু নাটকীয় পটপরিবর্তনে এখন তারা মুদ্রার উল্টা পিঠও দেখছেন। একসময় যে জনগণ তাদের নায়কের আসন দিয়েছিল, তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছিল, সেই জনগণ-ই তাদের ক্ষমতাচ্যুত করলো।