রহস্যঘেরা বক্তব্য আরিফের, পেয়েছেন ‘লন্ডনের’ সিগন্যাল!

লন্ডনে বসে এখনও রহস্যঘেরা বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তাঁর এমন বক্তব্যে এখনও দোটানায় নেতাকর্মীরা। নগরবাসীও অপেক্ষায় তাঁর মুখ থেকে পরিস্কার ‘হ্যাঁ অথবা না’ শব্দ শোনার জন্য।

সর্বশেষ লন্ডনের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একটি আলোচনায় সভায় আবারও কথায় ধুম্রজাল সৃষ্টি করলেন মেয়র আরিফ। এমনকি সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে শুধু এই কথাতেই সীমাবদ্ধ থাকলেন না। পরের কথায় বলে দিলেন- ‘পেয়ে গিয়েছেন সিগন্যাল’!

মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) লন্ডনের মেনর পার্ক এলাকাস্থ রয়েল রিজেন্টি কমিউনিটি সেন্টারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সামনে রহস্যঘেরা এমন বক্তব্যে দেন। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে যুক্তরাজ্যে যুবদল।

বক্তব্যের শুরুতে অনুষ্ঠানে আসা সবাইকে সিলেট নগরবাসীর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানান। পরে দৃঢ় কণ্ঠে জানিয়ে দেন- ‘বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না, সেজন্য সিলেট সিটি নির্বাচনে আমিও প্রার্থী হচ্ছি না।’ তবে পরের কথাতেই তারেক জিয়ার সাথে সাক্ষাতে ‘সিগন্যাল পেয়েছেন’ বলেও জানিয়ে দেন।

তিনি যখন এই কথা বলছিলেন তখন তার মুখে হাসি ছিলো। এসময় মঞ্চে বসা তারেক রহমানও হাসতে থাকেন। এই হাসির রহস্য হয়তো শুধু তারা দুজনেই জানেন।

মেয়র আরিফ বলেন, ‘সিলেট সিটি নির্বাচন নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, আমার নেতা তারেক জিয়ার কাছ থেকে সিগন্যাল পেয়েছি। তবে সেটা গ্রিন না রেড তা সময়ই বলে দেবে।’

তবে তাঁর এমন বক্তব্যে নতুন কিছুর আভাস পাচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেশকরা। তাঁদের মতে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না, তাই বিএনপি থেকে হয়তো সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না আরিফ। হতে পারে এটি দল থেকে পদত্যাগ করে ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সিগন্যাল’!

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সব কেন্দ্র মিলিয়ে আরিফুল হক চৌধুরীর প্রাপ্ত ভোট ছিল ৯২ হাজার ৫৯৩ ভোট। আর বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৮৬ হাজার ৩৯৭। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের চেয়ে ৬ হাজার ১৯৬ ভোট বেশি পেয়েছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী।

সিলেট পৌরসভাকে সিটি করপোরেশন ঘোষণা করা হয় ২০০২ সালে। প্রথম নির্বাচন হয় চার দলীয় জোট সরকার আমলে। এতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছিলেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। তিনি পৌরসভা থাকাকালে চেয়ারম্যান থেকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। পরে ২০০৮ সালে কারাগারে থাকা অবস্থায় দ্বিতীয়বার বিজয়ী হন কামরান। তৃতীয় নির্বাচন হয় ২০১৩ সালের ১৫ জুন। এ নির্বাচনে কামরানের সঙ্গে মেয়র পদে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। এতে আরিফুল হক পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭ হাজার ৩৩০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বদরউদ্দিন আহমদ কামরান পেয়েছিলেন ৭২ হাজার ২৩০ ভোট।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সঙ্গে লড়াই করেছিলেন আসাদ উদ্দিন আহমদ ও অধ্যাপক জাকির হোসেন। এরপর বদর উদ্দিন কামরান মনোনয়ন পেলেও শেষে নির্বাচনে পরাজয় বরণ করেন আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে।

এদিকে ২০২০ সালে কামরানের মৃত্যুর পর থেকে মেয়র পদে আরিফুল হক চৌধুরীকে ভোটের মাঠে চ্যালেঞ্জ করার মতো প্রার্থীর অভাব দেখা দেয় সিলেটে। তবে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সিসিক কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ, সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের ছেলে ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আরমান আহমদ শিপলু। সম্প্রতি লন্ডন থেকে সিলেটে এসে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মেয়র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।