সবে ভোরের আলো ফুটে উঠেছে। নতুন দিনের নতুন প্রভাতের সে আলোকেই যেন আহ্বান জানানো হলো বাঁশির রাগে। রমনা বটমূলে প্রতিবছরের মতো বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে সূর্য ওঠার আগেই প্রস্তুত হয়েছে সাংস্কৃতিক চর্চাকেন্দ্র ছায়ানটের শিল্পীরা। আহীর ভৈরব রাগের সুর ছড়িয়ে গিয়েছে রমনার বটমূল ছাড়িয়ে এখানকার সব সবুজের প্রাণে। এর পরের সংগীতটিই ছিল আঁধার রজনী পোহানোর বারতা নিয়ে। তাই ছায়ানটের বড়দের দলের শিল্পীরা সম্মেলকভাবে গাইলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁধার রজনী পোহালো, জগত পূরিল পুলকে/ বিমল প্রভাতকিরণে..
রমনার বটমূলে ঠিক সোয়া ৬টায় শুরু হয় বর্ষবরণের এই সুরের মাধুরী। একে একে পরিবেশন করা হয় মোট ২৯টি পরিবেশনা। কখনো রবীন্দ্রনাথের তোমার সুর শুনায়ে গানের মতো স্নিগ্ধ সুর ছড়িয়েছে, পরপরই যেন আবার এল বিমল আনন্দে জেগে ওঠার আহ্বানের গান। সেই সুরের সঙ্গে ছন্দ মিলিয়েই শুরু হলো কাজী নজরুল ইসলামের লেখা গান উদার অম্বর দরবারে তোর ।
এটি ছিল সম্মেলক সংগীত। একক সংগীতে শোনা গেল তিমির দুয়ার খোলার আহ্বান। খায়রুল আনাম শাকিলের কণ্ঠে প্রথম আলোক লহ প্রণিপাত যখন শুরু হয়েছে, তখন সূর্য পুরোপুরি স্পষ্ট। রমনার বটমূলে প্রথম দিনের প্রথম প্রভাতের পরিপূর্ণ আলো পেলেন বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে আসা মানুষেরা।
বেলা বাড়তে বাড়তে মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। রমনার সবুজের ভেতর উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে লাল-সাদা রঙের স্রোত। সবাই এসেছে বাংলা ১৪৩১-কে বরণ করে নিতে। নিরাপত্তাবেষ্টনীর জন্য অনেকটা পথ তাঁদের হেঁটে আসতে হয়েছে। তাঁরা গান শুনেছেন, কবিতা শুনেছেন, আপনজনের সঙ্গে ছবি তুলে মুহূর্তটি ধরে রেখেছেন। আর তখন পুরো সময়জুড়ে বেজে চলেছে ছায়ানটের শিল্পীদের পরিবেশনায় রবীন্দ্র, নজরুল, পঞ্চকবির গানসহ বাউল গান। কাজী নজরুল ইসলামের জীবন-বিজ্ঞান থেকে পাঠ করলেন সংস্কৃতিজন রামেন্দু মজুমদার। এর আগে রবীন্দ্রনাথের ত্রাণ ও অপমান থেকে পাঠ করে শোনালেন শিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। চন্দনা মজুমদারের শোনালেন লালনগীতি। মোট ১৩টি একক, ১২টি সম্মেলক সংগীত এবং দুটি পাঠ, কথন ও যন্ত্রসংগীত পরিবেশনা নিয়ে সাজানো হয়েছে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি…জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠান।