রপ্তানি আয় : সংকটে সুবাতাস

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ইস্যুকে কেন্দ্র করে চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে তৈরি পোশাক পণ্যসহ রপ্তানি আয়ে সুসংবাদ এসেছে। গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে নেতিবাচক ধারায় থাকার পর নভেম্বর মাসে ২০২১ সালের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি আয় বেড়েছে ১০৫ কোটি ১১ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। অর্থাৎ রপ্তানি আয় ২৬ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। বাংলাদেশি টাকায় যার (ডলার প্রতি ১০০ টাকা ধরে) পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ হাজার ৫১১ কোটির টাকার বেশি।

শুধু গত বছরের তুলনায় বেড়েছে তাই নয়, সরকারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৭২ কোটি ২৫ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। যা শতাংশের হিসাবে ১৭ দশমিক ০৭ শতাংশ বেশি। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ইপিবির তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশের তৈরি ৩১ ধরনের পণ্য বিশ্ববাজারে রপ্তানি হয়েছে। সেখান থেকে মোট আয় হয়েছে ৫০৯ কোটি ২৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার (টাকার অংকে এই অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ হাজার ৯২৫ কোটি টাকার বেশি)। ২০২১-২২ অর্থবছরের নভেম্বর মাসে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৪০৪ কোটি ১৩ লাখ ৯০ হাজার ডলার। সেই হিসাবে গত বছরের তুলনায় বিশ্ববাজারে পণ্য রপ্তানি আয় বেড়েছে ১০৫ কোটি ১১ লাখ ৭০ হাজার ডলার। যা শতাংশের ২৬ দশমিক ০১ শতাংশ রপ্তানি আয় বেড়েছে।

আরেকটি সুখবর হলো— বিদায়ী মাসে রপ্তানি আয়ে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৩৫ কোটি ডলার। সেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭৪ কোটি ২৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার বেশি আয় হয়েছে। অর্থাৎ, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭ দশমিক ০৭ শতাংশ বেশি রপ্তানি আয় হয়েছে।

খাতওয়ারি দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি আয় এসেছে পোশাক পণ্য রপ্তানি থেকে। এ খাতে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১১৪ কোটি ৩৮ লাখ ৯০ হাজার ডলার। শতাংশের হিসাবে বেড়েছে ৩৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

২০২১ সালের নভেম্বর মাসে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ৩২৩ কোটি ৫০ লাখ ৫০ হাজার ডলারের তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানি হয়েছে। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে রপ্তানি হয়েছে ৪৩৭ কোটি ৮৯ লাখ ৪০ হাজার ডলার। শতাংশের হিসাবে রপ্তানি ৩৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়েছে।

এ বিষয়ে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা কঠিন। মূল্যস্ফীতির প্রভাবে পোশাকের ইউনিটের দাম বৃদ্ধি, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি এবং সেইসঙ্গে আগের মাসগুলোতে অর্ডার বৃদ্ধি রপ্তানির পরিমাণ বাড়ার কারণ হতে পারে। বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি হতাশাজনক বলে মনে হচ্ছে এবং বিশ্বব্যাপী খুচরা ব্যবসা একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাই এ ধরনের রপ্তানির বৃদ্ধিকে আত্মতুষ্টির কারণ হিসেবে বিবেচনা করা ঠিক হবে না। আমরা সতর্ক এবং একইসঙ্গে ভবিষ্যতের বিষয়ে আশাবাদী। কারণ পোশাক শিল্পটি একটি টেকসই শিল্পে রূপান্তরিত হচ্ছে, যা আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।

তবে রপ্তানি আয় বাড়ায় খুশি বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান। তিনি বলেন, বিশ্বমন্দার এসময়ে এমন সুংসংবাদ আমরা কল্পনাও করিনি। এটা আসলেই প্রত্যাশার চেয়ে বেশি পাওয়া।

তিনি বলেন, প্রচলিত বাজারের পাশাপাশি অপ্রচলিত (নতুন) বাজারেও আমাদের রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ কারণে অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি বাড়ছে। আগামী দিনগুলোতেও এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আমরা আশা করছি।

ইপিবির সূত্র মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ২ হাজার ১৯৪ কোটি ৬০ লাখ (২১.৯৪ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছেন রপ্তানিকারকরা। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২১ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরের এই পাঁচ মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ১৯ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। এ হিসাবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১১ শতাংশ। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে প্রায় ১ শতাংশ।

মাস ওয়ারি হিসাবে দেখা গেছে, চলতি বছরের অক্টোবর মাসে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৪৩৫ কোটি ৬৬ লাখ ২০ হাজার ডলারের পণ্য। যা আগের বছর ছিল ৪৭২ কোটি ৭৫ লাখ ৩০ হাজার ডলার। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ কমেছে। তার আগের মাস সেপ্টেম্বরে ৩৯০ কোটি ৫৯ লাখ ৭০ হাজার ডলার রপ্তানি আয় হয়েছিল। আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ৪১৬ কোটি ৫৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার। অর্থাৎ ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ রপ্তানি কম হয়েছিল।

সূত্র : ঢাকা পোস্ট