চোখের রঙিন চশমা খুলে সিলেটসহ দেশের বাস্তবচিত্র দেখতে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সিলেট জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ। সিলেট অঞ্চলে সাম্প্রতিক বন্যা ভয়াবহতা এবং বিএনপির তৎপরতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঠাট্টার জবাব দিতে জেলা বিএনপি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ আহ্বান জানান।
বুধবার (২২ জুন) দুপুরের দিকে সিলেট নগরের দক্ষিণ দরগাহ গেইট এলাকায় একটি অভিজাত হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী।
তিনি বলেন, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যা চলমান রয়েছে। সিলেটের মানুষ অসহায় হয়ে চরম দুর্ভোগের মাঝে সময় পার করছেন। এই সময়ে প্রতিদিনের মত আজও আমাদের জেলার কোনো না কোনো প্রত্যন্ত অঞ্চলে বানবাসী মানুষদের পাশে থাকার কথা ছিল, এখানে আসার আগেও আমরা ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচীতে ছিলাম, এই সংবাদ সম্মেলনের পরও আমরা ছুটে চলব বন্যার্থদের পাশে। তাঁর পরও এই কঠিন সময়ে দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসতে হলো। সিলেটের মানুষ যখন অসহায় হয়ে নিরব কান্না করছে, বিএনপির নেতাকর্মীরা যখন পানি ডিঙ্গিয়ে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছে, ঠিক তখনই দেশের সবচেয়ে দায়িত্বশীল ব্যক্তি বন্যায় বিএনপির কর্মতৎপরতা নিয়ে ঠাট্টা করছেন।
কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, সিলেটে বন্যার শুরু থেকেই বিএনপি, অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম গণমাধ্যমে গুরুত্বের সাথে প্রচার হচ্ছে। কিন্তু তারপরও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি আমাদের তৎপরতা নিয়ে উপহাস করছেন। শুরু থেকেই আমরা বানবাসিদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করছি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সবাই সিলেটবাসীর খবর নিচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা ১৩টি উপজেলার ৩৬ হাজার ২শ’ পরিবারকে শুকনো খাবার, ১ লাখ ৯৩ হাজার জনকে তৈরি করা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি এবং ১১ হাজার ৩শ’ পরিবারকে নগদ অর্থ দিয়েছি। আগামীতে তা আরও বাড়বে। তারপরও যখন প্রধানমন্ত্রী আমাদের কার্যক্রম দেখেননা, তখন তা দেখার দায়িত্ব সিলেটবাসীর কাছে ছেড়ে দিলাম।
তিনি এবারের বন্যাকে মানবসৃষ্ট বন্যা উল্লেখ করে এজন্য দায়ী করেন কিশোরগঞ্জের হাওরে নির্মিত রাস্তাকে। রাস্তাটি রাষ্ট্রপতির বাড়ি যাওয়ার জন্য ৮৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত উল্লেখ করে এর কারণে উত্তরপূর্বাঞ্চলের মানুষকে হাবুডুবু খেতে হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন। এই সড়কের কারণে ঢলের পানি হাওর থেকে নদীতে নামতে বাধা পাচ্ছে। ভুল সড়ক বাঁধ ও অবকাঠামো নির্মাণের প্রতিক্রিয়ায় পানি নামতে পারছে না। তাই সহনশীল বন্যা দুঃসহ হয়ে উঠেছে।
বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির বিষয়ে কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ২০১৭ সালে হাওরের বাঁধ ভাঙার জন্য অনিয়ম আর ঠিকাদারদের দুর্নীতির কথা উঠে এসেছিল। এবার এসব ব্যাপারে তারা নিশ্চুপ। সিলেটের জলপ্রবাহের ওপর কী কী অনাচার হচ্ছে, তার তালিকা করার দাবি জানান তিনি।
বন্যায় ক্ষয়-ক্ষতির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ক্ষতির পরিমাণ সরকারীভাবে দেয়া হিসাবের চেয়ে আরো ভয়াবহ। সাম্প্রতিক বন্যায় এপর্যন্ত ২৩ জনের প্রাণহানী হয়েছে। আর কত প্রাণহানী হলে আওয়ামী লীগের দৃষ্টিতে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে? অবিলম্বে দুর্গতদের দীর্ঘ মেয়াদী খাদ্য সহায়তা দিন, পুণর্বাসন করুন। মানবসৃষ্ট বন্যার কারণ খুঁজুন ও মুক্তির জন্য নদী ড্রেজিংসহ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
সিলেটে ফ্লাইওভার ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেদের দুর্নীতি ঢাকতে পদ্মাসেতুর নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে নেতারা শ’ শ’ কোটি টাকা লুটপাট করেছেন। এখন সিলেটকে বিক্রি করে তারা মেগা প্রকল্পের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের পাঁয়তারা করছেন। দেশের একটি বৃহত্তর অঞ্চল যখন পানির নিচে, তখন সরকার পদ্মা সেতু উদ্বোধনের নামে কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশি শিল্পীদের এনে অনুষ্ঠানের নামে পানিবন্দি মানুষদের সাথে উপহাস করছে। জনগণ সময়মত এর দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেবে।
সবশেষে কাইয়ুম চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে বলেন, চোখের রঙ্গিন চশমা খুলুন, দেশের বাস্তব চিত্র দেখুন। সিলেট অঞ্চলকে বন্যা দুর্গত এলাকা ঘোষণা করে পর্যাপ্ত সহায়তা দিন। আপনাদের উপহাসের কারণে মানুষ কষ্টে আছে। জনগণ আপনাদের চায়না। তারা ভোট দিতে চায়। জিয়া পরিবার ও বিএনপির সমালোচনা বাদ দিয়ে বিদায় নেয়ার প্রস্তুতি নিন।
সংবাদ সম্মেলনে সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপি নেতা, শামীম আহমদ, অ্যাডভোকেট আশিক উদ্দিন, মাহবুবুর রব চৌধুরী ফয়ছল, ইসতিয়াক আহমদ সিদ্দিকী, মাহবুবুল হক চৌধুরী, কোহিনুর আহমদ, অ্যাডভোকেট মুজিব, রফিকুল ইসলাম শাহপরান, অ্যাড. মোস্তাক আহমদ, অ্যাড. আল আসলাম মুমিন, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মকসুদ আহমদ, যুবদল নেতা অ্যাড. সাঈদ আহমদ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আজিজুল হোসেন আজিজ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব জাকির হোসেন খান, সিলেট মহানগর ছাত্রদলের দলের সাধারণ ফজলে রাব্বি আহসান, ছাত্রদল নেতা আব্দুস সালাম টিপু, জেলা জাসাস’র সদস্য সচিব রায়হান এইচ খান, বিএনপি নেতা মনিরুল ইসলাম তুরণ, মাহবুব আলম, হাজি পাবেল, হারুন আহমদ, রায়হান আহমদ, শামসুর রহমান সুজা, মাহমুদ আহমদ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।