যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় সকাল থেকেই আশঙ্কার মেঘ। রানির স্বাস্থ্য নিয়ে রাজপ্রাসাদের বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ। বিকাল গড়াতেই খবর এলো ‘দ্য লন্ডন ব্রিজ ইজ ডাউন।’ বিশেষ এই কোডের অর্থ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ আর নেই।
নিয়ম অনুযায়ী রানির ব্যক্তিগত সচিব দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে প্রথমে জানান এ খবর। মরদেহ তখন স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্যালেসে। সেখানে ছিলেন প্রিন্স চার্লস, প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্স চার্লসের স্ত্রী ক্যামিলা।
পরে রাজপ্রাসাদের তরফে সোশাল মিডিয়ায় জানানো হয়, ‘রানি মারা গেছেন।’ এর সঙ্গেই সমাপ্তি ঘটে একটি অধ্যায়ের। থেমে গেলো একটি ইতিহাস।
১৯৫২ সালের জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড সফরে বেরিয়েছিলেন রানি এলিজাবেথ। সঙ্গে প্রিন্স ফিলিপ। পথে কেনিয়া নেমেছিলেন। সেখানেই রাজার মৃত্যুর খবর। দ্রুত দেশে ফেরেন, হাতে নেন রাজদণ্ড। তখন তিনি ২৫ বছরের তরুণী।
তিনি যখন ব্রিটেনের দায়িত্ব নেন ‘ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সূর্য অস্ত যায় না’ প্রবাদ তখন প্রায় ডুবে গেছে। যুদ্ধপরবর্তী কঠিন সময়। ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নিয়েই বলেছিলেন, ‘এই দায়িত্ব একা পালনের শক্তি হয়তো আমার নেই।’ সবার সহায়তা চান তিনি।
এরপর কেটে গেছে সাত দশকেরও বেশি সময়। টেমসের পানি গড়িয়েছে বহু দূর। ব্রিটেনের নিয়মতান্ত্রিক প্রধান হিসেবে তার কার্যকালে দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে বসেছেন ১৫ জন। আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে বসেছেন ১৪ জন। তিনি দেখেছেন মানুষের চাঁদে পা রাখা, বার্লিন প্রাচীরের ভাঙন কিংবা কোভিডের মতো মহামারি।
১৯৫৩ সালে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড দিয়ে এলিজাবেথের ছয় মাসের কমনওয়েলথ সফর শুরু। ১৯৬১ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ সফর করেন তিনি। তার আগে ৫০ বছর ব্রিটেনের কোনও শাসক এ অঞ্চলে পা রাখেননি। এলিজাবেথের আগে কোনও ব্রিটিশ শাসক দক্ষিণ আমেরিকাতেও যাননি। সেদিক থেকে পূর্বসূরীদের রক্ষণশীলতা অনেকটাই ভেঙেছিলেন তিনি।
ক্ষমতাগ্রহণের পর এক দশকও থিতু হওয়ার জন্য সময় পাননি। দেশ-বিদেশ করেই কেটেছে পুরোটা দশক। সমালোচকরা ‘মায়ের ভূমিকায় ব্যর্থ’ বলে বারবার বিদ্ধ করেছেন তাকে।
ষাটের দশকে অনেকটাই নিজের পরিবারকে সময় দিয়েছেন। ততদিনে তিনি অবশ্য রানি হিসেবে নিজেকের প্রমাণ করেই ফেলেছেন। জনপ্রিয়তাও ব্যাপক। রানির জীবন নিয়ে মানুষের উৎসাহ তুঙ্গে। তাতে একপাশে সরে থাকেনি বিতর্ক।
৯০-এর দশকে গণমাধ্যমের সমলোচনায় পড়েন তিনি। যা বেড়ে গিয়েছিল ১৯৯৭ সালে প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যুর পর। চার সন্তানের মধ্যে তিন জনেরই বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে। তা নিয়েও কম কথা শুনতে হয়নি।
বিতর্কের সেখানেই শেষ নয়। সম্প্রতি ছোট নাতি যুবরাজ হ্যারির স্ত্রী মেগান বর্ণবিদ্বেষের অভিযোগ এনেছেন রাজপরিবারের বিরুদ্ধে। রাজপরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে আমেরিকায় থিতু হয়েছেন হ্যারি। এ নিয়ে কখনও একটি শব্দ খরচ করেননি। ‘করদাতাদের টাকায় এতো সুযোগ-সুবিধা কেন পাবেন’— শেষ বেলায় শুনতে হয়েছে এমন কথাও।
কখনও কোনও সমালোচনার জবাব দেননি। কোনও কথা বলেননি। আর বলবেনও না। এখন সব কিছুর ঊর্ধ্বে ব্রিটিশদের প্রিয় লিলিবেথ।