যে কারণে মেসির এমন ভিন্ন উদযাপন

গতকাল রাতে মেসি নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে একটি অ্যাসিস্ট করেছেন, একটি গোল করেছেন। দুইটা নিয়েই আলাদা করে বড় কাব্য লেখা যায়। যেভাবে প্রথম গোলে মলিনাকে বল জুগিয়েছেন বা যেভাবে নেদারল্যান্ডসের ছয় ফুট আট ইঞ্চি উচ্চতার গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে পেনাল্টি থেকে গোল করেছেন সেটা মেসি বলেই পেরেছেন।

মেসি গোল করলে কি করেন? দুই হাতে মেলে ছুটে যান মাঠের কোনায়, এরপর দুই হাত উপরে দিকে তুলে স্মরণ করেন অনেক বছর আগে প্রয়াত দাদিকে। আবার কখনও উড়ন্ত লাফও দেন। এসবই আপনার জানা।

কিন্তু কাল গোলের পর মেসি কি করেছেন, খেয়াল করেছেন নিশ্চয়ই। দুই কানে হাত দিয়ে উদযাপন করেছেন, আর সেটাও নেদারল্যান্ডস কোচ লুই ফন হালের সামনে। দৃশ্যটা দেখে কি অবাক হয়েছেন! অবাক হওয়ারই কথা।

তবে যারা একটু বয়স্ক, অর্থাৎ অনেক আগে থেকে ফুটবল দেখেন তারা বোধহয়ও একটু বেশিই বিষ্মিত হয়েছিলেন। হয়তো একটু জোরেই বলে ফেলেছিলেন, আরে এতো রিকুয়েলমের সেলিব্রেশন।

তবে ইতিহাস যারা মনে রাখেন, তাদের বিষ্ময়ের মাত্রা ছিল আরও বেশি। কারন? সেটাই খোলাসা করছি এখন। রিকুয়েলমকে তো মনে আচ্ছে নিশ্চয়ই, আর্জেন্টিনার এক সময়ের মাঝমাঠে প্রান ভোমরা। যার পুরো নাম, হুয়ান রোমান রিকুয়েলমে।

মেসির উদযাপনের রহস্য উদঘাটন করতে গেলে ফিরে যেতে হবে অন্তত ২০ বছর ও ১২ বছর আগে। প্রথমে আসি ১৬ বছরের ইতিহাসে।

২০০২ সালে রিকুয়েলমেকে দলে ভিড়িয়েছিল বার্সেলোনা। তখন বার্সেলোনার কোচ লুই ফন হাল। অন্ধকার যুগ হিসেবে অভিহিত ওই সময়ে বার্সার চিরায়িত টিকিটাকা সরিয়ে পাওয়ার ফুটবল খেলানো শুরু করলেন হাল।

ধীর গতিতে খেলা রিকুয়েলমের তখন এটা নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল। এছাড়া হাল তো একবার বলেই বসলেন রিকুয়েলমেকে খেলানোর জন্য নয়, রাজনৈতিক কৌশলের জন্য কেনা হয়েছে। ফলে খুব বেশি ম্যাচও পেলেন না।

চ্যাম্পিয়নস লিগের এক ম্যাচে আচমকা শুরুর একাদশে সুযোগ পান রিকুয়েলমে। ওই ম্যাচে গোলের দেখাও পান তিনি। গোল করেই হালের সামনে গিয়ে দুই হাত কানে দিয়ে গোল উদযাপন করেন তিনি।

এই ম্যাচে গোল করে গালকে যেন রিকুয়েলমের সেই ঘটনাই মনে করিয়ে দিলেন মেসি। তবে ২০১০ সালের ঘটনা যারা জানেন তাদের এটা একটু বিষ্ময়করই বটে। কারণ, যে ঘটনায় রিকুয়েলমে আন্তর্জাতিক ফুটবল ছেড়েছেন সেখানে জড়িত আছেন মেসিও।

২০১০ সালে রিকুয়েলমেই আর্জেন্টিনার ১০ নম্বর জার্সি পড়তেন। কিন্তু তিনি যখন চোটে পড়ে দলের বাইরে তখন সেই সময়ের কোচ দিয়েগো ম্যারাডোনা মেসিকে ১০ নম্বর জার্সি দিয়ে দেন।

এটা নিয়ে এতটাই ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন রিকুয়েলমে, আর কখনও জাতীয় দলের হয়ে খেলেননি। এমনকি মেসি নিজে গিয়ে ১০ নম্বর জার্সি ফিরিয়ে দিতে চাইলেও রাজি হননি রিকুয়েলমে।

জাতীয় দলে যখন মেসির অভিষেক হয়, তখন রিকুয়েলমের সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ধারণা হয় জার্সি কাণ্ডে সেই সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে অনেক আগেই। তবে মেসি আরও একবার জানালেন, তার রিকুয়েলমের প্রতি কোনো রাগ নেই, নেই কোনো ক্ষোভ। বরং মেসির হৃদয়ে রিকুয়েলমে যেখানে ছিলেন, এখনও সেখানেই আছেন।