যেসব শর্তে মেট্রোরেলের জায়গা ভাড়া দেওয়া হবে

মেট্রোরেলের পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় যাত্রীদের কাছ থেকে পাওয়া ভাড়া দিয়ে মেটানো যাবে না। তাই ভাড়ার বাইরে অন্যান্য খাত থেকে আয়ের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে মেট্রোরেলের আওতাভুক্ত জায়গা বাণিজ্যিক স্পেস হিসেবে ভাড়া বা ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।

ডিএমটিসিএল-এর পরিকল্পনা অনুযায়ী, মেট্রোরেলের স্টেশন এলাকায় নির্মিত স্থায়ী ও অস্থায়ী অবকাঠামো, যেমন- রিটেইল শপ, স্টল/ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, মিনি শপ/ফাস্টফুড শপ, কফি শপ, ফুডকোর্ট, মানি এক্সচেঞ্জ , এটিএম বুথ, ভেন্ডিং মেশিন, কিয়স্ক (Kiosk)/, রিলাক্সেশন বুথ, কার বুকিং বুথ ইত্যাদি স্থাপনের জন্য জায়গা ভাড়া দেওয়া হবে।

অন্যান্য খাতের মধ্যে কনফারেন্স/সেমিনার রুম ঘণ্টা/দৈনিক ভিত্তিতে ভাড়া, প্যারাপেট ওয়াল (দৈর্ঘ্য-প্রস্থের ভিত্তিতে ভাড়া/ইজারা প্রদান করা যাবে; পিয়ারসমূহ গুচ্ছভিত্তিক ভাড়া/ইজারা, ট্রেনের অভ্যন্তরের স্পেস বিজ্ঞাপনের জন্য পৃথকভাবে ভাড়া/ইজারা দেওয়া হবে।

এছাড়া বিজ্ঞাপন, নাটক, সিনেমা, প্রামাণ্যচিত্র ইত্যাদির শুটিং, কার পার্কিং, স্বল্প সময়ের কোনও ক্যাম্পিং বা প্রচারণা, প্রদর্শনীর মতো অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমের জন্য ভাড়া দেওয়ার পরিকল্পনাও আছে। এজন্য ডিএমটিসিএল একটি খসড়া নীতিমালাও প্রণয়ন করেছে। সেখানে জুড়ে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন শর্ত।

নীতিমালা অনুযায়ী, মেট্রোরেলের জায়গা বাণিজ্যিকভাবে ভাড়া দেওয়ার জন্য একটি কমিটি থাকবে। এই কমিটি লে-আউট প্ল্যান অনুসরণে ভাড়া/ইজারার জন্য ক্যাটাগরিভিত্তিক স্থান নির্ধারণ; এলাকার বাণিজ্যিক গুরুত্ব বিবেচনা করে বাণিজ্যিক স্পেসের ভিত্তিমূল্য প্রাক্কলন; ভাড়া/ইজারা দেওয়ার জন্য আহ্বানকৃত দরপত্র/দর/আবেদনসমূহ যাচাই-বাছাই ও নির্বাচনের জন্য সুপারিশ করা; প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ভাড়া/ইজারা গ্রহীতার ভাড়া/ইজারা নবায়ন ও বাতিলের সুপারিশ করবে।

এতে বলা হয়েছে, বাণিজ্যিক জায়গা ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে অবাধ প্রতিযোগিতার নীতি অনুসরণ করে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির মাধ্যমে ভাড়া/ইজারা দিতে হবে। তবে স্বল্পমেয়াদি ভাড়া ইজারার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ অনুমোদিত পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারবে।

প্রাথমিকভাবে ভাড়া/ইজারার মেয়াদ সর্বোচ্চ পাঁচ বছর হবে। উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে শর্ত সাপেক্ষে এক বা একাধিক মেয়াদের জন্য চুক্তি নবায়ন করা যাবে। ভাড়া/ইজারা গ্রহণের দ্বিতীয় বছর থেকে প্রতি বছর ভাড়া/ইজারার মূল্য পূর্ববর্তী বছরের ভাড়া/ইজারা মূল্যের ওপর ন্যূনতম ৫ শতাংশ অথবা কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত হারে বৃদ্ধি পাবে। এক বা একাধিক স্টেশনের বাণিজ্যিক স্পেস উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে একক প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ভাড়া/ইজারা দেওয়া যাবে।

ইজারা গ্রহীতা নিয়োজিত কর্মচারীদের স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা উল্লেখসহ পূর্ণাঙ্গ জীবনবৃত্তান্ত, জাতীয় পরিচয়পত্র ভাড়া/ইজারা গ্রহীতাকে সংরক্ষণ করতে হবে। এসব কাগজের একটি কপি কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে। পুলিশ ভ্যারিফিকেশন সম্পাদন ও সন্তোষজনক প্রতিবেদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে কর্তৃপক্ষ পরিচয়পত্র দেবে।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভাড়া/ইজারা মূল্যসহ পুরো টাকা পরিশোধ করে ভাড়া/ইজারা গ্রহীতাকে চুক্তিপত্র সম্পাদন করতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে তার জমা করা আর্নেস্ট মানি/জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। উভয়পক্ষই তিন মাস আগে লিখিত নোটিশ দিয়ে ভাড়া/ইজারা বাতিল করতে পারবে।

মেট্রো স্টেশন ও স্থাপনাসমূহ কেপিআই (কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন বা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা) এলাকা। তাই কর্তৃপক্ষ এর নিরাপত্তার স্বার্থে কিংবা রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে কোনও কারণ দর্শানো ছাড়াই যেকোনও ভাড়া/ইজারা গ্রহীতার কার্যক্রম তাৎক্ষণিকভাবে বা ২৪ (চব্বিশ) ঘণ্টার নোটিশে বাতিল করতে পারবে। মেট্রো স্টেশন বা মেট্রোরেল লাইনের সুষ্ঠু অপারেশন, রক্ষণাবেক্ষণ, নিরাপত্তা, উন্নয়ন, সৌন্দর্যবর্ধন এবং প্রশাসনিক কাজের প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ ৩০ দিনের নোটিশে যেকোনও ভাড়া/ইজারা বাতিল করতে পারবে।

কর্তৃপক্ষ প্রশাসনিক, নিরাপত্তাজনিত কারণে অথবা কোনও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণে অথবা জনস্বার্থে বা জরুরি যেকোনও প্রয়োজনে ভাড়া/ইজারা চুক্তি বাতিল করলে ভাড়া/ইজারা গ্রহীতাকে বাকি সময়ের জন্য আনুপাতিক হারে ভাড়া/ইজারা মূল্য ফেরত দিতে পারবে।

নিরাপত্তার স্বার্থে ইলেকট্রিক্যাল লোড নিরাপদ সীমায় রাখার উদ্দেশ্যে ভাড়া/ইজারা গ্রহীতা ভাড়া/ইজারাস্থলে যেকোনও বৈদ্যুতিক, যোগাযোগ ও কম্পিউটার সরঞ্জাম/যন্ত্রপাতি সংস্থাপনের আগে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে। এ কারণে কোনও ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে বা ডিএমটিসিএল-এর বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার ক্ষতি হলে বা বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে কর্তৃপক্ষ ভাড়া/ইজারা গ্রহীতার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। নিরাপত্তার স্বার্থে ভাড়া/ইজারা গ্রহীতাকে ভাড়া/ইজারা স্থলে প্রয়োজনীয় সংখ্যক অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র নিজ খরচে সংযোজন করতে হবে।

আরও বলা হয়েছে, স্টেশনের রিটেইল ফ্লোর/লেভেল অথবা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত অন্য যেকোনও স্পেস/এলাকা ব্যতীত অন্যান্য রিটেইল এরিয়া ভাড়া/ ইজারা গ্রহীতা তৃতীয় কোনও পক্ষকে ভাড়া/সাব-লেট দিতে পারবে না। যে ব্যবসার জন্য ভাড়া/ইজারা দেওয়া হবে সে ব্যবসা ছাড়া অন্য কোনও ব্যবসার জন্য বা আবাসিক উদ্দেশ্যে বা অন্য কোনও বেআইনি বা অনৈতিক কাজে এই জায়গা ব্যবহার করা যাবে না। রিটেইল স্পেস ভাড়া/ইজারা গ্রহীতা তার ব্যবসা সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞাপন বা দোকানের সাইনবোর্ড ছাড়া অন্য কোনও বিজ্ঞাপন বা সাইনবোর্ড ভাড়া/ইজারা স্থানে প্রদর্শন করতে পারবে না।

এছাড়াও জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা, পরিবেশ নীতিমালা ও প্রযোজ্য অন্যান্য সরকারি নীতিমালা অনুসরণে বিজ্ঞাপন প্রচার করতে হবে। বিজ্ঞাপনে অশালীন বা দৃষ্টিকটু, সরকারি নীতির পরিপন্থী বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এমন কিছু প্রদর্শন করা যাবে না। বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত ভাষা, ছবি, ডে ইত্যাদির দায়-দায়িত্ব ভাড়া/ ইজারা গ্রহীতার ওপর বর্তাবে।

এ বিষয়ে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএনএন ছিদ্দিক বলেন, ‘ভাড়া থেকে মেট্রোরেলের ৭০ ভাগ ব্যয় মেটানো যাবে। বাকি ৩০ ভাগ ভাড়াবহির্ভূত আয় থেকে মেটাতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিছু বাণিজ্যিক জায়গা সব মেট্রোরেলেই থাকে। স্টেশনের ভেতর ছোট ছোট দুটি রুম আছে। আপনি যখন লিফটে উঠবেন, সমানে একটা বিজ্ঞাপন দিলে দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। এরকম বিষয়টা। আমাদের বাণিজ্যিক জায়গায় রান্নাবান্না করা যাবে না। এখন শুধু ক্যারিড ফুড (অন্য জায়গায় রান্না করে আনা খাবার) বিক্রি হবে।’

এমএনএন ছিদ্দিক জানান, খসড়া নীতিমালায় যে শর্তগুলো দেওয়া আছে তার ওপর জনমত নিয়ে তারপরে চূড়ান্ত করা হবে।