রাজধানী ঢাকার মিরপুরবাসী প্রায়ই দেখেন মেট্রোরেলের ট্রায়াল চলছে। এখন শুধু চালু হওয়ার অপেক্ষা। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, মানুষের মনে প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি মারছে—এই ট্রেন কতক্ষণ পরপর পাওয়া যাবে, ভাড়া কত হবে? এসব প্রশ্নের পাশাপাশি প্রশ্ন আসে ট্রেনে সারাক্ষণ বিদ্যুৎ থাকবে তো? না থাকলে ট্রেন কীভাবে চলবে?
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলছে, সারাদেশে যতগুলা গ্রিড আছে, মেট্রোরেলের সঙ্গে প্রত্যেকটার সংযোগ আছে। একটা গ্রিড ফেল করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্য গ্রিডে সুইচ করবে। কোনও বিরাট বিপর্যয়ের কারণে দেশের সবকটা গ্রিডের ইলেক্ট্রিসিটি যদি ফেল করে (যা খুবই বিরল) তারপরও মেট্রোরেলের নিজস্ব জেনারেটর ট্রেনগুলোকে নিকটস্থ স্টেশন পর্যন্ত নিয়ে যাবে।
মেট্রোরেল পরিচালনায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষ জানায়, উত্তরা ডিপো এবং মতিঝিল এলাকায় দুটি রিসিভিং সাবস্টেশন থাকবে। মতিঝিল রিসিভিং সাব-স্টেশনে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (পিজিসিবি) মানিকনগর গ্রিড সাবস্টেশন থেকে ১৩২ কেভি’র দুইটি পৃথক সার্কিট এবং উত্তরা রিসিভিং সাব-স্টেশনে পিজিসিবি’র টঙ্গী গ্রিড সাবস্টেশন হতে ১৩২ কেভি’র একটি সার্কিট ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) উত্তরা গ্রিড সাবস্টেশন থেকে ১৩২ কেভি’র অপর একটি সার্কিটের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ গ্রহণ করা হবে। উভয় রিসিভিং সাব-স্টেশনে ব্যাকআপ হিসেবে একটি করে অতিরিক্ত ট্রান্সফর্মার থাকবে। উপরন্তু পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থিত ডেসকোর ৩৩ কেভি সাবস্টেশন থেকে শেওড়াপাড়া মেট্রো স্টেশনে ৩৩ কেভি বৈদ্যুতিক সংযোগ থাকবে। ফলে মেট্রোরেল পরিচালনায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা নেই।
কোনও কারণে কোনও সময় জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া না গেলে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া আছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, মেট্রোরেলের এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম (ইএসএস) থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে মেট্রোরেলকে নিকটবর্তী স্টেশনে নিয়ে আসা হবে। উল্লেখ্য, ইএসএস মূলত ব্যাটারি ব্যাকআপ সিস্টেম। যা মেট্রো ট্রেনের রিজেনারেটিভ ব্রাকিং এনার্জি দ্বারা নিয়মিত চার্জ হতে থাকবে। এমআরটি লাইন-৬ বা বাংলাদেশের প্রথম উড়াল মেট্রোরেল পরিচালনায় ওভারহেড ক্যাটেনারি সিস্টেমে (ওসিএস) ১৫০০ ভোল্ট ডিসি ব্যবহৃত হবে। মেট্রোরেলে প্যান্টোগ্রাফ-এর সাহায্যে ওসিএস থেকে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ পাবে।
শুরুতে লাগবে দিনে ৮০ মেগাওয়াট
মেট্রোরেল চলাচলের জন্য প্রতিদিন ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে। ১৬০ মেগাওয়াট লাগবে উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত অপারেট করতে। শুরুতে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অপারেট করতে লাগবে প্রায় ৮০ মেগাওয়াট। উল্লেখ্য, মেট্রোরেলের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাপনার অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ-৭ এর অধীনে। কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ-৭ এর ঠিকাদার হচ্ছে জাপানের মারুবেনি কর্পোরেশন এবং ভারতের লারসেন অ্যান্ড টুবরো (এলঅ্যান্ডটি)।
যে কারণে পরিবেশবান্ধব
মেট্রোরেল বিদ্যুৎ চালিত হওয়ার কারণে, ঢাকার প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে না। ফসিল ফুয়েল ব্যবহার না হওয়ার কারণে ঢাকার বাতাসে মেট্রোরেলের জন্য বাড়তি কোনও কার্বন নিঃসরণ হবে না। মেট্রোরেল চলাচলে যে আওয়াজ হবে, তা মেট্রোরেল রুটের যে কোনও স্থানে বর্তমানে যে ডেসিবেলের শব্দমাত্রা বিরাজমান – সেটাকে ছাড়িয়ে যাবে না।