পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিঙ্কেন আগামী ১০ এপ্রিল ওয়াশিংটনে বৈঠকে বসছেন। এ বৈঠকে যোগ দিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন শুক্রবার (৭ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন।
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে দুদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এ বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বেশকিছু সুস্পষ্ট বার্তা দেওয়া হতে পারে।
ঢাকার পক্ষ থেকে যেসব আলোচনা উঠতে পারে
২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এরপর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ র্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে চলেছে। ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠকে এ ইস্যুটি আবারও উঠতে পারে।
এছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই সরব ভূমিকায় রয়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ও শরণার্থীদের অর্থ সহায়তার বিষয়টি তুলতে পারেন ড. মোমেন। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানো নিয়েও আলোচনা হতে পারে। এছাড়া চলতি মাসের শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগদানের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে যেসব আলোচনা উঠতে পারে
বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। আগামী জাতীয় নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়, সে বিষয়টি নিয়ে আবারও আলোচনা তুলতে পারেন ব্লিঙ্কেন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো প্যাসিফিক কৌশলে বাংলাদেশকে পাশে চায় দেশটি। ব্লিঙ্কেনের বৈঠকে এ ইস্যুটি আসতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, শ্রম অধিকার, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ, ইউক্রেন ইস্যু আলোচনায় প্রাধান্য পেতে পারে।
অ্যান্টনি জে ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে ড. মোমেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে দাওয়াত দিয়েছেন। অবশ্যই বলবো আমরা খুব লাকি। আমরা পর পর তিনবার তার দাওয়াত পেলাম। আমাদের উন্নয়ন মহাসড়কের সঙ্গে আমেরিকা যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। আর আমাদের সম্পর্কেরও উন্নতি হয়েছে। দুই বছর কোভিডের জন্য আমাদের আনাগোনা কম ছিল। এখন তাদের দাওয়াত আমি সানন্দে গ্রহণ করেছি।
তিনি আরও বলেছেন, আমেরিকা আমাদের সবচেয়ে বড় বন্ধু দেশ। তারা আমাদের বড় বিনিয়োগকারী দেশ। আর সেখানে আমাদের অন্যতম রপ্তানির গন্তব্য। আমেরিকাই একমাত্র দেশ কোভিডকালে তারা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ১০০ মিলিয়নের বেশি টিকা দিয়েছে। আমরা টিকা অন্য জায়গা থেকে কিনেছি। আর তারা বাড়িতে টিকা পৌঁছে দিয়েছে। আর রোহিঙ্গারা আসার পর যে দেশ সবচেয়ে বেশি পাশে দাঁড়িয়েছে সেটা আমেরিকা। অন্য দেশও অবশ্য সহায়তা করছে। তাদের এসব কাজের অবশ্যই প্রশংসা করবো।
ড. মোমেন জানান, বাণিজ্য যেন বাড়ানো যায়, সেই নিয়ে আলাপ হবে। আর তারা চায়, বাংলাদেশে যেন স্বচ্ছ, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন হোক। আমরাও এটা চাই। এ নিয়ে আমাদের সঙ্গে তাদের দ্বিমত নেই।
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে গত বছরের ৪ এপ্রিল ওয়াশিংটনে ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও অ্যান্টনি জে ব্লিঙ্কেন বৈঠক করেছিলেন। এক বছর পর আবারও দুই নেতা আলোচনায় বসছেন।