মৌলভীবাজার এবং হবিগঞ্জ জেলায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নদ-নদীর পানি। ইতোমধ্যে অনেক বাসা-বাড়ি ও সড়ক থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। পানি কমে যাওয়ায় অনেক লোকজন তাদের বসতবাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে। তবে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে ভেসে উঠছে রাস্তাঘাট,বাড়িঘরসহ নানা স্থাপনার ক্ষত চিহ্ন। ফলে দীর্ঘদিন পরে বসতবাড়িতে এসে নতুন করে দুঃচিন্তায় পড়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা।
এবার হবিগঞ্জ জেলায় বড় ধরনের বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি না হলেও যেসব নিন্মাঞ্চলে পানি উঠেছে সেইসব অঞ্চল থেকে পানি নেমে যাওয়ায় সড়কে দেখা দিয়েছে খানাখন্দ ,সৃষ্টি হয়েছে গর্তের, ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ব্রীজ, কালভার্টগুলোরও। এছাড়াও বাড়ি ঘরের সামনে কাঁদাসহ ময়লা আবর্জনা লেগে আছে। ফলে পরিবার নিয়ে মানুষজন চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ।
হবিগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার দেয়া সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, জেলার চুনারুঘাট , মাধবপুর , শায়েস্তাগঞ্জ , হবিগঞ্জ , নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলা বন্যাকবলিত হয়। এসব উপজেলায় মোট ৩০টি ইউনিয়নের ১৭ হাজার ৬৮৫টি পরিবার বন্যা কবলিত হয়। আর এতে করে ৭০ হাজার ২৪০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানান জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা।
সার্বিকভাবে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে মৌলভীবাজারেও। জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার অধিকাংশ জায়গা থেকে পানি নেমে গেছে। এতে স্বস্তি ফিরেছে পানিবন্দি মানুষের মাঝে। তবে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ভেসে উঠছে ক্ষত চিহ্ন। বন্যার কারণে জেলার অনেকগুলো কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়ছে। ঘরবাড়িগুলো ঠিক করার কাজে ব্যস্ত বাসিন্দারা। এ ছাড়া বন্যায় মূল সড়ক ও অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো ভেঙে গেছে। যাতায়াতেও চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয়রা।
কমলগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নে পানিবন্দি হওয়া কিছু মানুষের সাথে আলাপ হলে তারা জানান, আমাদের বাড়ি ঘর থেকে পানি নেমে গেলেও এখনই আমরা বাড়িতে যেতে পারছি না। যে কারণে আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছি। তবে বাড়ি ঘর পরিস্কারের জন্য আমরা এসেছি। পুরো ঘর বাড়ি কাঁদা ও ময়লা আবর্জনায় ভরে গেছে। তা পরিস্কার করতে হবে। তারা বলেন, বাড়িতে যেসব মালামাল রয়ে গেছিল তা সেইসব মালামাল পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে।
মৌলভীবাজার জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছাদু মিয়ার তথ্যমতে আজ বুধবার (২৮ আগস্ট) সকাল পর্যন্ত জেলায় প্রায় ২ লক্ষ মানুষ পানিবন্দি আছেন। এর মধ্যে ৬২ টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১০১১৭ জন মানুষ রয়েছেন। পানি কমতে শুরু করায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে মানুষ ধীরে ধীরে তাদের বাড়ির দিকে যাচ্ছেন বলে জানান এই কর্মকর্তা। বন্যায় জেলার বেশকিছু ঘরবাড়ি,রাস্তাঘাট, বাধঁ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও সঠিকভাবে বলা যাবে না। প্রকৃত হিসেব বের করতে আমরা কাজ করছি।
এদিকে এবার সিলেট এবং সুনামগঞ্জ জেলার কোথাও বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। সিলেটের সুরমা, লোভা, সারি ,কুশিয়ারা, এবং সুনামগঞ্জের কালনী ,কুশিয়ারা এবং জাদুকাটা নদীর পানি কিছুটা বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও গত তিনদিন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় নদীগুলোর পানি কমছে।
বুধবার (২৮ আগস্ট) পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ফলে সিলেটের নদীগুলোর পানি বাড়েনি। ফলে এ মুহুর্তে সিলেটের কোথাও বন্যার কোন সম্ভাবনা নেই।