নিজের দ্বিতীয় ওভারে বেশ আশা জাগিয়েছিলেন দিল্লির হয়ে বাংলাদেশি বোলার মোস্তাফিজুর রহমান। সফলতা ধরে রেখেছিলেন নিজের তৃতীয় ওভারেও। তবে চারে এসে আর পারলেন না। অনেকটা জয়ের বন্দরেই পৌঁছে দিলেন প্রতিপক্ষ মুম্বাই ইন্ডিয়ানসকে। সেই সাথে টানা চতুর্থ পরাজয়ের স্বাদ নিলো দিল্লি ক্যাপিটালস।
এর আগে বাংলাদেশের মোস্তাফিজুর রহমানকে ছাড়া খেলে হারের হ্যাটট্রিক করেছিল দিল্লি ক্যাপিটালস। প্রথম তিন ম্যাচেই হারা দলটি আজ আর মোস্তাফিজকে ছাড়া একাদশ সাজায়নি। বাংলাদেশের তারকা পেসারকে নিয়েও অবশ্য জিততে পারেনি দিল্লি। শেষ বলে গড়ানো আরেকটি নাটকীয় ম্যাচে ৬ উইকেটে জিতে তৃতীয় ম্যাচে এসে প্রথম জয়ের দেখা পেয়েছে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস।
আনরিখ নর্কিয়ার করা শেষ ওভারটায় ৫ রান দরকার ছিল মুম্বাইয়ের। দক্ষিণ আফ্রিকান ফাস্ট বোলার কী দারুণ বোলিংই না করলেন। ইয়র্কারে পসরা সাজিয়ে দুই ক্যামেরন গ্রিন ও টিম ডেভিডকে প্রথম পাঁচ বলে মাত্র ৩ রান দিলেন নর্কিয়া।
১ বলে ২ রান—এমন সমীকরণে আর ইয়র্কার দিতে পারেননি নর্কিয়া। বলটাকে লং অফের দিকে পাঠিয়েই পড়িমরি দৌড়ে ২ রান নিলেন ডেভিড। দ্বিতীয় রানটা ডেভিড পূর্ণ করতে পারবেন তো, এমন সংশয় থেকে সুপার ওভারের প্রসঙ্গও চলে এসেছিল ধারাভাষ্যকারদের কণ্ঠে। দিল্লি অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার জুতসই থ্রো করতে পারেননি। বলটা উঠে গিয়েছিল একটু ওপরে। পোরেল যতক্ষণে বলটা হাতে নিয়ে উইকেট ভেঙেছেন ততক্ষণে ডেভিড নিরাপদেই দলকে নিয়ে গেছেন জয়ের বন্দরে। ডেভিড ১১ বলে ১৩ ও গ্রিন ৮ বলে ১৭ রান করে অপরাজিত ছিলেন।
ডেভিডদের ১৭৩ রানের লক্ষ্য দিতে পেরেছিল দিল্লি। রোহিত শর্মা ও ঈশান কিষানের উদ্বোধনী জুটি ৭.৩ ওভারে মুম্বাইকে এনে দেয় ৭১ রান। রানআউট হওয়া কিষান ২৬ বলে করেছেন ৩১ রান। এরপর তিলক বর্মাকে নিয়ে ৬৮ রানের জুটি গড়েন মুম্বাই অধিনায়ক রোহিত। ২৯ বলে ৪১ রান করেছেন ৪টি ছক্কা মারা তিলক। তিলক যখন মুকেশ কুমারের বলে ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ তুলে দলকে ১৩৯ রানে রেখে ফিরলেন মুম্বাইয়ের দরকার ২৫ বলে ৩৪ রান।
মুকেশের পরের বলেই বাজে ফর্মে থাকা সূর্যকুমার যাদব আরেকটি গোল্ডেন ডাক নিয়ে বিদায় নেওয়ার পরও ৭ উইকেট হাতে নিয়ে ২৪ বলে ৩৪ রানের সমীকরণটাকে খুব কঠিন মনে হয়নি মুম্বাইয়ের। সেটি যে শেষ পর্যন্ত শেষ বলের নাটকীয়তায় রূপ পেল তাতে অবদান আছে বাংলাদেশের মোস্তাফিজেরও।
দিল্লি অধিনায়ক মোস্তাফিজের হাতে বল তুলে দেন দ্বিতীয় ওভারেই। ওভারটা অবশ্য ভুলে যেতে চাইবেন এই বাঁহাতি পেসার। মুম্বাই ওপেনার ঈশান কিষান যে টানা তিনটি চার মেরেছেন মোস্তাফিজের বলে।
ওই ওভারে ১৩ রান দেওয়া মোস্তাফিজ পরে ফিরেছেন দারুণভাবেই। ওয়ার্নার আবার তাঁকে ডাকেন ১৫তম ওভারে। প্রথম দুই বলেই কাটার দেওয়া মোস্তাফিজের ওভার থেকে রোহিত শর্মা ও তিলক বর্মারা নিতে পারলেন মাত্র ২ রান।
পরের ওভারে দুটি চার খেলেও মোস্তাফিজ বিদায় করেন মুম্বাই অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে। ওয়াইড ইয়র্কার দিয়েছিলেন মোস্তাফিজ। ৪৫ বলে ৬৫ রান করা রোহিত সেই বল খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। দিল্লির উইকেটকিপার অভিষেক পোরেল ডান দিকে ঝাঁপিয়ে দারুণ এক ক্যাচ নিয়েছেন। বাম্প বল কিনা সেটি জানতে রিভিউ নিয়েছিলেন রোহিত। তাতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তিত হয়নি।
১৯তম ওভারে মোস্তাফিজ যখন শেষ ওভারটি করতে এলেন ১২ বলে ২০ রান দরকার মুম্বাইয়ে প্রথম দুই বলে ২ রান দেওয়া মোস্তাফিজ শেষ তিন বলে খেলেন দুটি ছক্কা। চতুর্থ বলটি ছিল স্লোয়ার অফকাটার, তাতে ডিপ মিডউইকেট দিয়ে প্রথম ছক্কাটি মারেন অস্ট্রেলীয় অলরাউন্ডার ক্যামেরন গ্রিন। ওভারের শেষ বলটাতেও কাটার দিয়েছিলেন মোস্তাফিজ, এবার ওয়াইড লং অন দিয়ে ছক্কা মেরে দেন আরেক অস্ট্রেলীয় টিম ডেভিড। ৪ ওভারে ৩৮ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়ে শুরু হলো মোস্তাফিজের এবারের আইপিএল।
এবার আইপিএলে দিল্লি অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারের স্ট্রাইক রেট নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। ওয়ার্নার আজ ফিফটি (৪৭ বলে ৫১) তুলে নিলেও ১০৮.৫১ স্ট্রাইক রেট নিয়েও সমালোচনা হবে। সাতে নামা অক্ষর প্যাটেল ৫ ছক্কা ও ৪ চারে ২৫ বলে ৫৪ করায় ১৯.৪ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে ১৭২ রান করে দিল্লি। শেষ ৫ ওভারে ৪৯ রান তোলে ওয়ার্নারের দল।
আগে ব্যাটিংয়ে নেমে দিল্লির শুরুটা হয়েছে মোটামুটি। চতুর্থ ওভারে পৃথ্বীশ (১৫) আউট হওয়ার আগে ওপেনিং জুটিতে উঠেছে ৩৩ রান। ২২ বলে ৩৩ রানের জুটি গড়েন ওয়ার্নার-পৃথ্বী শ। মাঝে তিনটি জুটি গড়ার চেষ্টা করেও পারেনি দিল্লি। ষষ্ঠ উইকেটে ওয়ার্নার-অক্ষরের ৩৫ বলে ৬৭ রানের জুটিতে দ্রুতগতিতে রান তুলতে পেরেছে দলটি। এই জুটিতে ওয়ার্নারের অবদান ১০ বলে মাত্র ৯। অক্ষর একাই তুলেছেন ২৫ বলে ৫৪। জেসন বেরেনডর্ফের করা ১৯তম ওভারের প্রথম বলে অক্ষর আউট হওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয় এই জুটি। ওই ওভারে একটি রানআউটসহ মোট ৪ উইকেট হারায় দিল্লি। ৩টি করে উইকেট নেন পীযূষ চাওলা ও বেরেনডর্ফ।