মোবাইল লেনদেন বা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে গত আগস্টে এক হাজার ১০১ কোটি ৮০ লাখ টাকা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। মাস-ভিত্তিতে আসা রেমিট্যান্স হিসাবে এটি পাঁচ বছরে সর্বোচ্চ। ক্রমেই কমতে থাকা দেশের রিজার্ভকে শক্তিশালী করতে আশার আলো দেখাচ্ছে এটি।
২০২৩ সালের আগস্টে এমএফএসের মাধ্যমে পাঠানো ৫১৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১৩ শতাংশ। বর্তমানে রিজার্ভের পরিমাণ প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালের আগস্টে যা ছিল রেকর্ড ৪০ দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ব্যাংকিং খাত বিঘ্ন ও এটিএম বুথে টাকা কম থাকায় এমএফএসের মাধ্যমে রেমিট্যান্স লেনদেন বেশি হয়েছে। এছাড়া প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো, ব্যাংকের মাধ্যমে আসা রেমিট্যান্সের উপর আড়াই শতাংশ সরকারি প্রণোদনা ও এমএফএস সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর নানান সুবিধার কারণে রেমিট্যান্স বেড়েছে।
বর্তমানে দেশে বিকাশ, নগদ ও রকেটসহ অন্তত ১৩ এমএফএস প্রতিষ্ঠান আছে। যার মাধ্যমে ব্যাংকের পাশাপাশি প্রতিনিয়তই পরিবারের কাছে অর্থ পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো গত জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে ৫৪ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স পেয়েছে। জুলাই মাসে প্রবাসীরা এমএফএসের মাধ্যমে দেশে পাঠিয়েছেন সাত হাজার ১৪৪ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এমএফএসের মাধ্যমে আগস্টের রেমিট্যান্স প্রবাহ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের পর সর্বোচ্চ।
গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর রেমিট্যান্স বেড়েছে।
গত আগস্টে এমএফএস-সহ সব আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে মোট রেমিট্যান্স প্রায় ৩৯ শতাংশ বেড়ে দুই বিলিয়ন দুই বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স আরও বেড়েছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় তা ৮০ দশমিক ২৮ শতাংশ বেড়ে হয়েছে দুই দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। এছাড়াও, আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে আট দশমিক ১২ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।
সহজলভ্যতা ও নগদ টাকার সুবিধা ছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি ও এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রচেষ্টা প্রবাসীদের আনুষ্ঠানিক চ্যানেল ব্যবহারকে উৎসাহিত করছে।
পাশাপাশি, বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত যেমন—ব্যক্তিগত এমএফএস অ্যাকাউন্ট থেকে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে একক লেনদেনের সর্বোচ্চ সীমা এক লাখ ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে আড়াই লাখ টাকা করা—রেমিট্যান্স বেশি আসার পেছনে কাজ করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিকাশের চিফ কর্মাশিয়াল অফিসার আলী আহমেদ মনে করেন, অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে রেমিট্যান্সের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বীকৃতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তিনি ডেইলি স্টারের বারাত দিয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সমন্বিত প্রচেষ্টা ও এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত ও বিতরণমূলক সহায়তায় প্রবাসীরা ডিজিটাল চ্যানেলে সফলভাবে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।’