মুখরোচক ‘লালি’ তৈরিতে ব্যস্ত চুনারুঘাটের আঁখ চাষিরা

আখের রস দিয়ে গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চুনারুঘাট উপজেলার রাজার বাজার, খেতামারা ও মুখিপুর গ্রামের কয়েকটি পরিবার। স্থানীয় ভাষায় মুখরোচক এই খাবারকে ‘লালি’ নামে ডাকা হয়। শীতকালে চালের গুড়া দিয়ে তৈরি যে কোনো ধরনের পিঠার সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায় এই লালি।

শীতকালে প্রায় তিন মাস ধরে বাড়ির পাশে খালি জায়গায় লোহার ঘানি বসিয়ে আখের রস করে তা থেকে তৈরি করা হচ্ছে শত শত লিটার সুস্বাদু লালি। আগে রস উৎপাদনের ঘানী টানতে মহিষ ব্যবহার করা হলেও এখন লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। ব্যবহার হচ্ছে ডিজেল চালিত ইঞ্জিন। এই লালি তৈরি করে অনেক পরিবার আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

সরেজমিন রাজার বাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, লালি তৈরিতে দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন খামারিরা। সেই কাক ডাকা ভোর থেকে তাদের কাজ শুরু হয় চলে রাত অবদি। কেউ লোহার ঘানি টানছেন। কেউ চুলায় জ্বাল দিচ্ছেন। পরে লালি তৈরি হয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে তা পাতলা কাপড় দিয়ে ছেকে রাখছেন।

কথা হয় ওই এলাকার লালি তৈরির কারিগর জাহাঙ্গীর মিয়ার সঙ্গে। তার কাছ থেকে শোনা গেল আখ থেকে লালি তৈরির প্রক্রিয়া।

তিনি বলেন, ‘আমরা ভোরে গিয়ে ক্ষেতে থেকে আঁখ কেটে নিয়ে আসি। তারপর আঁখগুলো লোহার ঘানিতে ঢুকানো হয়। মেশিনের সাহায্যে ঘুর্নায়মান ঘানি থেকে আখের রস বের হতে থাকে। কিছুক্ষণ পর পর রসগুলো জমিয়ে মাটির চুলার উপর পাতের কড়াইতে ঢেলে দেওয়া হয়। আগুনে জ্বালিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা পর তা উঠিয়ে পাতলা কাপড় দিয়ে ছেকে প্রস্তুত করা হয় বিক্রির জন্য। বিভিন্ন দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এসে আমাদের কাছ থেকে প্রতি লিটার ১০০ টাকা ধরে কিনে যায় এ লালি।

পার্শ্ববর্তী আরেক লালির কারিগর নজরুল মিয়া বলেন, এটা আমাদের বাপ-দাদাদের পেশা। যুগ যুগ ধরে তারা এ কাজ করে গেছেন তাই আমরা করছি। এ লালির গুণগত মান অনেক ভাল।

লালি বিক্রেতা মরম আলী বলেন, আমাদের গ্রামের লোকজন কয়েক যুগ ধরে আখ থেকে লালি তৈরি করছেন। আমরা ছোটবেলা থেকেই তা দেখে আসছি। এ শিল্পের সঙ্গে এক সময় আমাদের গ্রামের অনেক পরিবার জড়িত ছিল। বর্তমানে অল্প সংখ্যক লোক এই ব্যবসা করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের অঞ্চলের লালির গুণগত মান অনেক ভাল। লালি কেনার জন্য জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন এখানে আসছেন। অল্প পুঁজিতে লালি তৈরি করে অনেক পরিবার লাভবানও হচ্ছেন।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এ বছর ৪০৫ হেক্টর জমিতে আখের চাষ হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. নুরে আলম সিদ্দিকী জানান, কৃষকদেরকে কৃষি বিভাগ থেকে সার্বক্ষণিক সকল ধরণের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও যদি কোন আখ চাষির কৃষি ঋণ কিংবা কোন ধরণের পরামর্শের প্রয়োজন হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে গেলেই সেই সহায়তা তারা পাবেন।