হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন। একটি চক্র দীর্ঘদিন যাবত এই পলিথিন ব্যাগ বিক্রি করে যাচ্ছে। হাট-বাজারগুলোতে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ অবাধে বিক্রি করা হলেও প্রশাসনের অভিযান নেই বললেই চলে। এই পলিথিন ব্যাগ সহজে পাওয়ায় লোকজন এখন পাটের তৈরি ব্যাগ কিনতে আগ্রহ হারাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাধবপুর পৌরশহর, মনতলা, চৌমুহনী, ধর্মঘর, ছাতিয়াইন, তেলিয়াপাড়া, নোয়াপাড়া, শাহপুর, হরষপুর ও শাহজীবাজার এলাকাসহ ছোট-বড় বাজারগুলোতে এসব পলিথিন বিক্রি হচ্ছে। সহজে পাওয়ায় খুচরা দোকানদাররাও ক্রেতার হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন পলিথিনের ব্যাগ। মাধবপুর সদরসহ কয়েকটি বাজারের বড় বড় দোকানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে পলিথিনের রোল।
এদিকে, সাধারণ লোকজন এই পলিথিন ব্যবহার করে যত্রতত্র ফেলে দেওয়ায় পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিনষ্ট হচ্ছে। নদী, খাল, বিলে ফেলা হচ্ছে পলিথিন। এতে নদী হারাচ্ছে তার নাব্যতা।
পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনা করে বাংলাদেশে ২০০২ সালে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের প্রেক্ষিতে পলিথিনের ব্যাগ উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন এবং পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়। তবু পলিথিনের ব্যবহার বন্ধের কোনো উদ্যোগ নেই।
পলিথিনের দূষণ নিয়ে সারা বিশ্বে চলছে শোরগোল। গবেষকরা বলছেন, বর্তমানে পলিথিনে দূষণের মাত্রা বজায় থাকলে ২০৫০ নাগাদ সাগরে মাছের চাইতে পলিথিনের খন্ডিত অংশের সংখ্যা বেশি হবে। বিষয়টি কতটা উদ্বেগের, তা হয়তো আমরা অনেকেই বুঝতে পারছি না।
শহর কিংবা গ্রাম প্রতিটি অঞ্চলের ক্ষেত্রেই জলাবদ্ধতা একটি মারাত্মক সমস্যা। শহর ও গ্রামের পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য ব্যবহৃত হয় ড্রেন। কিন্তু ইদানিং এই ড্রেন ময়লায় বন্ধ হয়ে গিয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে। ময়লার মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশজুড়ে রয়েছে পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল।
প্রভাষক আব্বাস উদ্দিন মিজান বলেন, আমরা পরিবেশ দূষণের পক্ষে নই। পলিথিন মাটির নিচে গিয়েও পচে না। এটির ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকার পলিথিন নিষিদ্ধ করলেও স্থানীয় প্রশাসন এটির বেচাকেনা বন্ধ করা জরুরি। আর উপজেলা প্রশাসন পলিথিন ব্যবহার না করার বিষয়ে সচেতনতামূলক সেমিনার করতে পারে। তাতে অনেকেই পলিথিন ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে জানতে পারবে।
মাধবপুর উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইশতিয়াক আল মামুন বলেন, আমরা বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য পলিথিন ব্যবহার করে বহন করি। নিম্নমানের এসব পলিথিন খাদ্যে এক ধরনের বিষক্রিয়া তৈরি করে যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। পলিথিনে মোড়ানো গরম খাবার খেলে মানুষের ক্যান্সার ও চর্মরোগের সংক্রমণ হতে পারে। পলিথিনে মাছ ও মাংস প্যাকিং করলে তাতে ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়। এছাড়া উজ্জ্বল রঙের পলিথিনে রয়েছে সিসা ও ক্যাডমিয়াম, যার সংস্পর্শে চর্মরোগ তৈরি হয়।
মাধবপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনজুর আহসান জানান, এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।