হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার দরগাহবাড়ী পৌর দাখিল মাদ্রাসার সুপারের অনিয়ম, দুনীতির বিরুদ্ধে ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি বাতিলের দাবিতে ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী ও সাবেক শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে এলাকাবাসী হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
লিখিত অভিযোগে জানা যায়, ২০১৫ সাল থেকে মাদ্রাসার অফিস সহকারী পদটি শূন্য। মাদ্রাসার দায়িত্বরত সুপার মো. সিদ্দিকুর রহমান দীর্ঘদিন নিজেই মাদ্রাসার নিজস্ব জমির আয় ব্যয়, শিক্ষার্থীদের বেতন, সেশন ফি’সহ সকল ধরনের অর্থনৈতিক লেনদেন করেন। পরিচালনা কমিটির লোকজনদের ভুল বুঝিয়ে একচেটিয়াভাবে অর্থ আত্মসাত ও শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে দিচ্ছেন। কোন শিক্ষক ও কর্মচারি ভয়ে তার বিরুদ্ধে মুখ খোলে না। মাদ্রাসার সুপার শিক্ষার্থীদের সরকারী রেজিস্ট্রেশন ফি এবং ফরম ফিলাপের অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন।
গত ২০২৩ সালের ২৪ মার্চ গোপনে সুকৌশলে এলাকার অফিস সহকারী কম্পিউটার অপারেটর পদে একজন প্রার্থীর কাগজপত্র গ্রহন করে তাকে না জানিয়ে সাজানো তিনজন প্রার্থী দেখিয়ে সুপারের ছেলে জুনাঈদকে (কেরানী) অফিস সহকারী কম্পিউটার অপারেটর পদে এবং কমিটির সদস্য রহমত আলীর ছেলে মো. রাসেলকে দপ্তরী পদে, তার নিজ পছন্দ আর্থী আয়া পদে ও তার নিকট আত্মীয় সহ মোট ৪ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন।
অভিযোগ অনুযায়ী জানা যায়, সুপার সিদ্দিকুর রহমান মাদ্রাসায় নিয়োগ নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে তার নিজ গ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার এক্তারপুর গ্রামের ২ জন শিক্ষককে স্বজনপ্রীতি করে নিয়োগ দিয়েছেন।
অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, দীর্ঘদিনযাবত লোকচক্ষুর আড়ালে বারবার একই সদস্য নিয়ে পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। বর্তমান কমিটির একাধিক সদস্য আছে যাদের কোন সন্তান ওই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী নয়। তাছাড়া গত কিছুদিন আগে মাদ্রাসার জন্য দপ্তরীসহ কয়েকটি পদে গোপনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। যা মাদ্রাসার অনেক শিক্ষক, কর্মচারী ও কোন শিক্ষার্থী অবগত নয়।
মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী শিক্ষক মো. মাহমুদুল হাসান শারীরিক অসুস্থতার কারণে হাঁটাচলা এবং কথা বলতে পারেন না। এ কারণে ২০১৫ সাল থেকে তিনি মাদরাসায় যেতে পারেন না। কিন্তু মৌলভী শিক্ষকের স্বাক্ষর জাল করে প্রতিষ্ঠানের প্রধান মো. সিদ্দিকুর রহমান বেতন আত্মসাত করছেন।
এদিকে মাদ্রাসার সুপারের অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ও পরিচালনা কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি গঠন করার দাবিতে সম্প্রতি মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষার্থীরা ও এলাকাবাসী মানববন্ধন করে।
মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষার্থী মাজহারুল ইসলাম রেজভি জানান, ‘এই দুর্নীতিবাজ প্রিন্সিপালকে অনতিবিলম্বে মাদ্রাসা থেকে বহিস্কার চাই। নয়তো পরবর্তীতে তারা আরো কঠোর আন্দোলনে ডাক দিবে।’
মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম জানান, উল্লেখযোগ্য কিছু অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে এই মাদ্রাসায়। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ফরম পূরণের তুলনায় এখানে ফরম পূরণে বেশী টাকা নেওয়া হচ্ছে। চলছে নিয়োগ বাণিজ্যও। এখানে সুপারের একার আধিপত্য। এই প্রতিষ্ঠানের যে ম্যানেজিং কমিটি (পরিচালনা কমিটি) এটি অবৈধ কমিটি।
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটির বেতন-ভাতা অনেক বেশী। যে বেতন-ভাতা আসছে সেগুলো প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে জমা হচ্ছে না। আমাদের এই প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত। এখানে ফরম ফিলাপের যে টাকা নেওয়া হয় সেগুলোর কোন ভাউচারও দেওয়া হয় না। অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকা সবাই সুপারের কাছে জিম্মি।
মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষার্থী জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অবৈধ কমিটি বাতিল চাই ও সুপারের বহিস্কার চাই।’
মনির খান নামে এক চাকরি প্রার্থী জানান, ‘মাদ্রাসার সুপারের সঙ্গে তার কথা হয়েছিল সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা দিলে অফিস সহকারী চাকরিটা তাকে দিবে। কথা মত উনাকে অর্ধেক টাকা দেওয়া হয়। হুজুরের হাতে চাকরির দরখাস্ত দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি পরীক্ষার তারিখ বলেন নি। পরবর্তীতে শুনলাম উনি ৩ জন প্রার্থী সাজিয়ে পরীক্ষা নিয়ে নিয়েছে। হুজুর উনার ছেলে জুনাইদকে এই পদে চাকরি দিয়েছেন।’
মাধবপুর পৌর সভার ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবজাল পাঠান জানান, বিগত ৮ বছর যাবত একজন শিক্ষক অসুস্থ। উনার মেয়েকে দিয়ে উনি ক্লাস করান। আমরা যতটুকু জানি না, অভিভাবক সদস্য হলে ম্যানেজিং কমিটি (পরিচালনা কমিটি)র সদস্য হতে হয়। আর কখন চাকরির বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে তিনি জানেন না।
মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মো. সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘আমি যেখানে কথা বলার সেখানেই বলছি। আমি কারো বিরুদ্ধে কিছু বলব না। এই সবকিছুই উদ্দেশ্য প্রণোদিত।’
এ ব্যপারে মাধবপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল হোসেন জানান, ‘এই বিষয়টা সম্পর্কে একটি অভিযোগ পেয়েছি। ইউএনও মহোদয় আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন বিষয়টি দেখার জন্য।’