হবিগঞ্জের মাধবপুরে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের আশেপাশে, ভারতীয় সীমান্ত এলাকা, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও হাট-বাজার সংলগ্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য করাতকল। যার বেশিরভাগেরই সরকারি অনুমোদন নেই। এতে করে বড় অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
বন বিভাগের তথ্য মতে মাধবপুর উপজেলায় ১১টি বৈধ করাতকল রয়েছে আর অবৈধ করাতকল রয়েছে ১৯টি। আরও তিনটি রয়েছে আবেদিত।
সরকারি হিসাবে উপজেলার ৩০টি বৈধ-অবৈধ করাতকল থাকলেও অনুসন্ধানে দেখা যায় মাধবপুর উপজেলার ধর্মঘর, চৌমুহনী, বহরা, আন্দিউড়া, শাহজাহানপুর, নোয়াপাড়া ও পৌরসভার আশেপাশে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে প্রায় শতাধিক করাতকল। স্কুল-কলেজ, হাট-বাজারের আশেপাশে এইসব করাতকলগুলো স্থাপন করার নিয়ম না থাকলেও অদৃশ্য শক্তির কারণে দিনের পর দিন চলছে এসব করাতকল।
করাতকল আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত বনভূমির সীমানা থেকে ১০ কিলোমিটার মধ্যে করাতকল স্থাপন করা যাবে না। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমানা থেকে ৫ কিলোমিটারের করাতকল স্থাপন করা যাবে না। কোন সরকারি অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এমন স্থান হতে দুইশত মিটার দূরে করাতকল স্থাপন করার বিধান রয়েছে। অথচ কোন নিয়মই মানা হয়নি এসব করাতকল প্রতিষ্ঠায়।
কয়েকজন বৈধ করাতকল মালিক জানান, বন বিভাগের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে এবং সীমান্ত এলাকার ৫ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপনের নিয়ম না থাকলেও কিছু লোক শক্তির বলে ও বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বন বিভাগের খুব নিকটে করাতকল বসিয়েছে। এইসব অবৈধ করাতকল মালিকরা বন থেকে পাচার হওয়া গাছ চিরাই করে এখন লাভবান। আর যারা বৈধ করাতকলের মালিক তাদের মিলে এখন কাজ নেই।
মো. শরিফ উদ্দিন নামে একজন করাতকল ব্যবসায়ী জানান, অবৈধ করাতকলগুলোর কারণে বৈধ করাতকলগুলোর মালিকরা তাদের ব্যবসা বন্ধের উপক্রম। বাপ-দাদার আমলের করাতকল ব্যবসা এখন টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। বৈধ করাতকলগুলোর মালিকরা বনবিভাগের কিছু লোকজনকে ম্যানেজ করে দিনের পর দিন করাতকল চালিয়ে যাচ্ছে।
মাধবপুর পৌর শহরের করাতকল ব্যবসায়ী মনোজ কুমার মোদক জানান, আগে হাতেগোনা কয়েকটি করাতকল ছিল। এখন পৌর শহরের বাইরেও অনেক করাতকল গড়ে উঠেছে। এসব অবৈধ করাতকলের কারণে লাইসেন্সধারি করাতকল মালিকরা কোন মতে ঠিকে আছে।
মনতলা বাজারের করাতকল ব্যবসায়ী এডভোকেট ইয়াকুব খান জানান, অবৈধ করাতকল বন্ধের জন্য প্রশাসনের জরুরী অভিযান প্রয়োজন। এই অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে, যেন অবৈধ করাতকল বসাতে না পারে।
রঘুনন্দন রেঞ্জ কর্মকর্তা খলিলুর রহমান জানান, তিনি এখানে যোগদান করার পর ৩টি অভিযান পরিচালনা করেছেন। বেশ কয়েকটি মামলাও দেওয়া হয়েছে।
মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অফিসার একেএম ফয়সল জানান, শিঘ্রই অবৈধ করাতকলগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।