মহা নবমী, লোকারণ্য শান্তিগঞ্জের পূজা মণ্ডপ

বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মহানবমী আজ। দেবী দুর্গার কৈলাশে ফেরার সময় এসেছে। চারদিনের আনন্দ উচ্ছ্বাসের পর তাই ভক্তদের মন ভালো নেই। দেবী দুর্গা কৈলাশ থেকে এবছর পিত্রালয়ে এসেছেন ঘোড়ায় চড়ে। ষষ্ঠী বোধনের মাধ্যমে চার দিন আগে মর্ত্যে এসেছিলেন তিনি। কাল বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ফিরাযাত্রা করবেন দুর্গতিনাশিনী দুর্গা।

সোমবার (২৩ অক্টোবর) মহানবমীতে পূজার শেষ সময় দেবী দুর্গার সামনে পরম ভক্তি নিয়ে মাথা ঠুকতে শান্তিগঞ্জ উপজেলার ২৪টি পূজামণ্ডপে ছিল পূজার্থীদের উপচে পড়া ভীড়। উৎসবের পাশাপাশি ভক্তদের চোখেমুখে ছিলো বিষাদের ছাপ। দেবী দুর্গা চলে যাবেন, আবার তাঁকে দেখতে অপেক্ষা করতে হবে একটি বছর। এজন্য বিষাদ কাজ করছিলো পূণ্যার্থীদের মাঝে।

জানা যায়, এবছর শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ২৪টি পূজামণ্ডপে আরাধনা করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এরমধ্যে জয়কলস ইউনিয়নে সর্বোচ্চ ৯টি মণ্ডপে দেবী দুর্গার আরাধনা করেছেন ভক্তরা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মণ্ডপ হয়েছে পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নে। ৫টি মণ্ডপের মাধ্যমে দেবীর পায়ে মাথা ঠুকেছেন ভক্তকূল। পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নে ৩টি, দরগাপাশায় ২টি, পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নে ৩টি, পাথারিয়া ও পূর্ব পাগলা ইউনিয়নে ১টি করে মোট ২টি সহ ২৪টি মণ্ডপে দেবী দূর্গার আরাধনায় ব্যস্ত ছিলেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

শান্তিগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা যায়, কোনো রকমের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই পুরো উপজেলায় ২৪টি মণ্ডপের মাধ্যমে শারদীয় দুর্গাপূজা পালিত হয়েছে। এজন্য উপজেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, উপজেলা প্রশাসনসহ সকলকে ধন্যবাদ জানান তারা। তারা জানান, আগামীকাল সকাল থেকে বিভিন্ন সময় নির্দিষ্ট নদী, দিঘী ও জলাশয়ে দেবী দুর্গার বিসর্জনের মাধ্যমে দুর্গা পূজার সমাপ্তি ঘটবে।

অপু পাল ও রুপন পাল জানান, অত্যন্ত সুন্দরভাবে মহানবমী উদযাপন হচ্ছে। তবে কিছুটা বিষাদও আছে। আগামীকাল দেবী বিসর্জন হবে। পূজার শেষ দিন। আমরা চাই, দেবীর আগমনে পৃথিবী শান্তিময় হোক।

পশ্চিম পাগলা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রঞ্জিত সুত্রধর বলেন, আমরা টানা চারদিন নির্বিঘ্নে পূজা উদযাপন করেছি। ঘুরাঘুরি করেছি। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আইনশৃঙ্খলার দিকটি অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এজন্য শান্তিগঞ্জ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।

উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুরঞ্জিত চৌধুরী টপ্পা বলেন, আজ মহা নবমীর দিন। অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে এবছর পূজা উদযাপন করতে পেরেছি। এটা সম্ভব হয়েছে সকলের সহযোগিতায়। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই। আগামীকাল মহা দশমী। বিসর্জনের দিয়ে শেষ হবে এবারের শারদীয় উৎসব। এজন্য কিছুটা বিষাদও অন্তরে কাজ করছে।

উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান দুলন রাণী তালুকদার বলেন, আজ মহানবমীর মাধ্যমে শারদীয় দুর্গাপূজার মুল আনুষ্ঠানিকতা শেষ হচ্ছে। দুর্গা মায়ের ফেরার সময় এসেছে। অত্যন্ত সুন্দর ও শান্তিপ্রিয়ভাবে পূজা শেষ হচ্ছে। থানা, উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদের সহযোগীতায় পূজা সুন্দরভাবে শেষ হচ্ছে। মা দূর্গার কাছে প্রার্থনা তিনি যেন সব অশুভ শক্তির বিনাশ করে পৃথিবীকে শান্তিময় করেন।

শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালেদ চৌধুরী বলেন, আমরা আমাদের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। এখনো করছি। আমরা মাঠে ছিলাম। কাজ করেছি। সব সময় আমাদের টিম মণ্ডপে মণ্ডপে টহলে ছিলো। দুর্গা বিসর্জনের আগ পর্যন্ত আমরা তৎপর আছি। এ বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি।