মশা মারতে বিমানবন্দরে বসবে ফ্রান্সের ফাঁদ

মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে রাসায়নিক ওষুধ প্রয়োগের বাইরেও মশা তাড়াতে প্রাকৃতিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। গাঁদা, লেমন গ্রাস ও তুলসি গাছের মতো মশা নিরোধক চারা বিমানবন্দর এলাকায় লাগানো হয়েছে। বিমানবন্দরে এয়ার ও ল্যান্ড সাইডের বিভিন্ন খাল ও পুকুরে গাপ্পি মাছ ছাড়া হয়েছে। এবার বিমানবন্দরে ফ্রান্সের প্রযুক্তির মশা মারার ফাঁদ বসানোর উদ্যোগ নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, ফ্রান্সের QISTA কোম্পানির তৈরি মসকিটো ট্র্যাপ মেশিন পরীক্ষামূলকভাবে উত্তরায় ব্যবহার করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এ মেশিনটি আশপাশের মশাকে আকৃষ্ট করে ফাঁদে আটকাতে সক্ষম। কৃত্রিমভাবে মানুষের ঘামের গন্ধ ও কার্বন-ডাই অক্সাইড ব্যবহার করে এই ফাঁদ মশাদের আকৃষ্ট করে। এরপর মশা ফাঁদে আটকা পড়ে।

জানা গেছে, মশা নিধনের উদ্দেশ্যে ৩ নভেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও ডিএনসিসি’র মধ্যে একটি সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। উত্তর সিটির ফাঁদের বিষয়টি সেখানে আলোচনায় আসে। বিমানবন্দরের ক্যানোপি, সিআইপি গেট, অ্যাপ্রোন এরিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় মশা মারতে সাতটি ফাঁদ পরীক্ষামূলকভাবে স্থাপনের বিষয়ে আলোচনা হয়। পরবর্তীতে QISTA-এর বাংলাদেশি প্রতিনিধি গিগা পাওয়ার করপোরেশনকে জরুরি ভিত্তিতে মশা মারার ফাঁদ স্থাপন করতে চিঠি দেয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

গিগা পাওয়ার করপোরেশনের পরিচালক গাজী সেলিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মসকিটো ট্র্যাপ মেশিন পরীক্ষামূলকভাবে উত্তরায় বসানোর পর সন্তোষজনক ফলাফল পাওয়া গেছে। যেসব জায়গায় মশা বেশি, সেগুলোর আয়তন বিবেচনা করে এই মেশিনগুলো স্থাপন করতে হয়। বিমানবন্দরের মতো বড় জায়গায় সুফল পেতে হলে চারপাশে মেশিন বসাতে হবে। আমরা একটি সমীক্ষা করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে জানাবো।

সূত্রে জানা গেছে, জুলাই ও সেপ্টেম্বর মাসে সিডিসি দুটি সার্ভে করে বিমানবন্দরে। দুটি সার্ভের ফলাফলে বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে পরিচ্ছন্নতা ও লার্ভার নিয়ন্ত্রণ আগের চেয়ে সন্তোষজনক। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিমানবন্দরের আশপাশের বসতি এলাকাগুলোকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিমানবন্দরের আশপাশের এক থেকে দুই কিলোমিটার এলাকায় পরিচ্ছন্নতা ও লার্ভার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ডিএনসিসিকে অনুরোধ করেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। বিমানবন্দর সংলগ্ন ১, ৬ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডকে বিশেষভাবে নজর রাখার পাশাপাশি দুই মাস পর পর সার্ভে করার জন্য অনুরোধ করেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, লার্ভা নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিন বিমানবন্দরের বিভিন্ন স্থানে সকালে কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) এবং ডিএনসিসির পরামর্শ মোতাবেক ওষুধ ব্যবহার করে লার্ভিসাইড স্প্রে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। প্রতিদিন বিমানবন্দরের বিভিন্ন স্থানে ইনসেকটিসাইড স্প্রে/ফগিং করা হয়। বিমানবন্দরে যাত্রীদের জন্য গেট খোলা রাখতে হয়, ফলে সব প্রবেশ ও বহির্গমন গেটের দুই পাশে ভোর এবং সন্ধ্যায় ধূপ ধোঁয়া দেওয়া হয়। বিমানবন্দরের বিভিন্ন স্থানে ছোট আকারে মসকিটো ট্রাপও আছে। কয়েক মাস আগে বিমানবন্দরে এয়ার ও ল্যান্ড সাইডের বিভিন্ন খাল ও পুকুরে গাপ্পি মাছ ছাড়া হয়েছে। বিমানবন্দরে মশা নিরোধক ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে। বিমানবন্দরের অভ্যন্তর এলাকায় খাল ও পুকুর নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। বিমানবন্দর ও আশপাশের এলাকার বর্জ্য নিয়মিত অপসারণ করা হয়।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গু মশার উপদ্রবসহ আসন্ন শীত মৌসুমে কিউলেক্স মশার সমস্যা নিরসনে নিরলস কাজ চলছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোলের সহায়তায় মশা নিধন চলছে। কার্যকর সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে যাত্রীদের যাতে মশার উপদ্রবের মুখোমুখি না হতে হয়।

মশার ফাঁদ প্রসঙ্গে নির্বাহী পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে মশা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে করা হচ্ছে। মশা নিধন কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্নভাবে তদারকি করা হয়। যেহেতু মশা মরার ফাঁদ সিটি করপোরেশন ব্যবহার করছে, এ কারণে বিমানবন্দরের বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষামূলক ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।