সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার প্রত্যন্ত একটি গ্রাম লৌলারচর। এই গ্রামের উত্তরপাশের মুচি সম্প্রদায়ের ৫ পরিবার আজও ভূমিহীন হয়ে জীবনযাপন করছে। স্বাধীনতার ৫২ বছরে নানাভাবে মানুষের দিনবদল হয়েছে। অথচ এই পাঁচ পরিবার আজও ভূমিহীন!
জানা যায়, শ্যামলাল রবী দাস ১৯৭৮ সালে স্ত্রী ও ২ পুত্র কন্যা সন্তান নিয়ে দিরাই উপজেলার চন্ডীপুর থেকে ছেড়ে এসে লৌলারচর গ্রামের উত্তরদিক নদীর পাশে আলীফ মিয়া তালুকদারের একটি খালি জায়গায় বসতভিটা গড়ে তুলেন। এখানে এসে পেশাগতভাবে জুতা সেলাই ও নৌয়ারচর ও লৌলারচরের মধ্যবর্তী নদীতে নৌকা দিয়ে লোকজন পারাপার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। শ্যামলাল রবী দাস ২০১৪ সালে স্ত্রী সহ ৭ জন পুত্র ও কন্যা সন্তান রেখে মৃত্যুবরণ করেন।
উনার স্ত্রী লক্ষী রাণী রবী দাস বলেন, ‘আমরা অনেক বছর ধইরা এইখানে আছি। নিজের ঘর নাই বাড়ি নাই, পরের জায়গায় ঘর বাইন্দা থাকি। একখান থাইক্কা আরেকখান ছাইরা আইছি ইতার লাগি সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা পাই না। টিভিতে শুনছি প্রধানমন্ত্রী কইছে বাংলাদেশে একজনও ভূমিহীন থাকত না। দেখ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশরে কত উন্নতি করের কিন্তু এই দেশে আমরা মুচি ইতার লাগি আজকেও ভূমিহীন আছি। প্রধানমন্ত্রী আমরার মানবতার নেত্রী, সে যদি একটু মায়া করে আমরারে মাথা গুজার ঠাঁই করে দেয় আমরা ধন্য হইমু। নইলে মরলে পরে আমরার লাশ থওয়ার জায়গা নাই।’
তার বড় ছেলে সুনীল রবী দাস বলেন, ‘পরের জায়গায় ঘর বাইন্দা এখন আমরা ৫ ঘর আছি। আজকে যদি কয় এই জায়গা ছাড়তাম ছাড়ত হইব। তখন মা, ভাই, বৌ বাচ্চা নিয়া রাস্তায় গিয়া থাকতে ওইব। কত মাইনসে কততা পায়। সরকার দেখছি ঘরও দেয়। আমরার যে কিচ্ছু নাই, আমরারে দিলে সরকারের কমব নি? আমরা তো এই দেশের নাগরিক ওই।’
কথা হয় লৌলারচর গ্রামের ইউপি সদস্য খোকন তালুকদারের সাথে। তিনি বলেন, ‘এরারে রিলিফ টিলিফ দেই। কিন্তু এরা ভূমিহীন এরা আমরার জায়গাত থাকে। সরকারি সুযোগ সুবিধা আইলে দিমুনে।’
চরনারচর ইউপি চেয়ারম্যান পরিতোষ রায় বলেন, এরারে সরকারি সুযোগ সুবিধা দিছে কয়েক মাস আগে। তারা খুব কষ্টে আছে। তারাতো আমাদের মধ্যে অবহেলিত। বর্তমান সরকার চাইতেছে যারা অবহেলিত মানুষ, সমাজে যারা ছোট কাজ করে, তারা যদি না থাকত সমাজ অপরিষ্কার থাকত। এরাই প্রকৃত কাজ করে। কিন্তু আমরা তারারে প্রকৃত মূল্যায়ন দিতে পারি না। সরকার চাইতাছে তাদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল করুক। তাদের স্বয়ংসম্পূর্ণ করা হউক। সরকারের যে ইচ্ছাটা আমরা তা পূরণ করতে পারতাছি না। বিভিন্নভাবে তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাইতাছে। আমরা যদি তাদের প্রকৃত সম্মান করতে ও দিতে হয়, তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা কইরা তাদের যে সরকারি সুযোগ সুবিধা গুলা আমরা সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালাইয়া তাদের সুবিধাগুলা তাদের কাছে তুইল্লা দেওয়া দরকার।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষদের আলাদা আলাদাভাবে মূল্যায়ন করতাছে। কিন্তু তারা এতটুকু পায় না। কাজেই আমরা সবাই একত্রিত হইয়া যদি একটু সহযোগিতা করি তাইলে তাদের প্রকৃত অবস্থানটা ফিরা আইব। বর্তমান সরকার যেটা চাইছে তাদেরকে সঠিক জায়গায় উত্তীর্ণ করা আমাদের সম্ভব হইব। অন্যথায় সম্ভব না। এখনো সময় সুযোগ আছে, আমরা যদি একমত থাকি সরকারের ইচ্ছা পূরণ করা সম্ভব। সরকারের কত পতিত জায়গা পরে রইছে। এই পতিত জায়গায় যদি তাদের বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। তাইলে তারা গৃহহীন আর থাকবে না। সরকারের যে ঘরগুলি দিতাছে, তাদের মধ্যে কিছু দেওয়া হয় তবে অবশ্যই সমাজের কাজগুলি তারা আরও স্বাধীনভাবে করতে পারবে। আমরা যারা প্রতিনিধি আছি আমাদের বিশেষ দায়িত্ব এদের লক্ষ্য রাখা, তাদেরকে প্রকৃত অধিকার দেওয়া।’
তিনি আরও বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে এখানে যে আছে তাদের সাথে সম্পর্কটা কম। এখানে ৪/৫ঘর আছে হঠাৎ করে মনে হইছে। আমি আমার জায়গা থেকে যতটুকু পারি তাদের দেখব।’