মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চা শ্রমিকদের কর্মবিরতি অব্যাহত

বর্তমান বাজারে দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চা শ্রমিকদের মজুরি ৩০০ টাকায় উন্নীত করার দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) থেকে সারাদেশে ১৬৭টি চা-বাগানে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত তিনদিনের কর্মবিরতি চলছে। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন ভ্যালির যৌথ সিদ্ধান্তে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

এর অংশ হিসেবে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ২২টি চা-বাগানে আজ বুধবার (১০ আগস্ট) ২য় দিনের মতো সকাল ৯টা থেকে কর্মবিরতি, প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।

এসব চা-বাগানের শ্রমিকরা কাজে যোগদান না করে সকালে প্রতিটি চা-বাগানের কারখানার সামনে অবস্থান করে কর্মবিরতি পালনসহ প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় কমলগঞ্জের শ্রীগোবিন্দপুর, মদনমোহনপুর ও মাধবপুর চা-বাগানের কারখানার সামনে গিয়ে দেখা যায়, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-দলই ভ্যালির স্থানীয় বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি-সম্পাদকসহ সকল নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে কর্মবিরতি চলছে।

এসব প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন, চা শ্রমিক নেতা ও মাসিক চা মজদুর এর সম্পাদক সীতারাম বীন, ইউপি সদস্য সাবিদ আলী, মাধবপুর চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি বাবুল আহমদ, মদনমোহনপুর চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি উমা শংকর গোয়ালা, সাধারণ সম্পাদক অযোধ্যা প্রসাদ কৈরী, নারীনেত্রী আরতী পাশি, আদরী বাক্তি, সুলতান মিয়া, শ্রীগোবিন্দপুর বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মিলন নায়েক, চা শ্রমিক নেতা সুমন পাইনকা প্রমুখ।

মনু-ধলাই ভ্যালির সভাপতি ধনা বাউরী জানান, চা শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধির দাবি দীর্ঘদিনের। প্রতি বছর মজুরি বাড়ানোর কথা থাকলেও গত ৩ বছর ধরে মজুরি বাড়ানো হচ্ছে না। এ অবস্থায় বর্তমান বাজারে দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চা শ্রমিকদের মজুরি ৩০০ টাকায় উন্নীত করার দাবিতে মঙ্গলবার থেকে সকল চা-বাগানে ২ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ৩ দিনের মধ্যে আমাদের দাবি মানা না হলে দেশের সব বাগান এক সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হবে। আপাতত প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করবেন।

এদিকে বিভিন্ন প্রতিবাদ সভায় চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলেছেন, দেশ-বিদেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনা করে নুন্যতম মানবাধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার দিতে হবে। চা শ্রমিকের হাজিরা ১২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় উন্নীত করার দাবি অনেকদিনের। মালিকপক্ষ ইতোমধ্যে মাত্র ১৪ টাকা বর্ধিত করার প্রস্তাব দিয়েছে। ১৪ টাকা বৃদ্ধি হলে একজন শ্রমিকের মজুরী হবে ১৩৪ টাকা। এই ১৩৪ টাকা দিয়ে কিভাবে একজন শ্রমিকের জীবন চলবে? সারাদিন পরিশ্রম করে এক লিটার পেট্রোলের দামও হবে না।

বক্তারা বলেন, মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ঘোষিত কর্মবিরতির পর কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাহী উপদেষ্টা ও কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রাম ভজন কৈরি বলেন, মজুরি বোর্ডের কাছে তাদের প্রস্তাব হলো দৈনিক মজুরী ৩০০ টাকা করতে হবে। নিজ নিজ বাগানে পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতির নেতৃত্বে দ্বিপাক্ষিক শ্রমচুক্তি বিলম্বিত হওয়ার প্রতিবাদে ২ ঘণ্টার কর্মবিরতিসহ প্রতিবাদ সভা চলবে। যদি প্রতিবাদ সভার পরেও কোনো সমাধান না আসে, তাহলে পরবর্তীতে সারাদেশে চা শ্রমিকরা কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবেন।