প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ইভিএমে পুরোপুরি আস্থাভাজন হতে পারিনি। আমরা প্রহসনের নির্বাচন করতে চাই না। দিনের ভোট দিনেই হবে। ভোট রাতে হবে না—এটা স্পষ্ট করে বলতে চাই।
মঙ্গলবার (২৪ মে) সকালে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ের সামনে এসব কথা বলেন সিইসি।
এ সময় সিইসি দাবি করেন, ইভিএমের ত্রুটি শণাক্ত করতে পারলে কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণার মতো কোনো ‘উদ্ভট’ কথা তিনি বলেননি।
তিনি বলেন, আমরা পাঁচটা মিটিং করেছি, পুরোপুরি আস্থাভাজন হতে পারিনি; আরও মিটিং হবে। সেখানে পর্যালোচনা করবো। প্রয়োজনে ওপনে মিটিং করবো। আমরা বলেছি— ইভিএম নিয়ে সবার আস্থা অর্জন করতে চাই। কালকেও কারিগরি মিটিং হবে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনকে প্রহসনে রূপান্তর করার কোনো ইচ্ছে আমাদের নেই। এটা আমরা অন্তর থেকে বলছি। সুন্দর নির্বাচন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে সুস্থ ধারা অব্যাহত থাকুক।
এ সময় চার নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান মাদারীপুরে গিয়ে বলেছিলেন, ‘ইভিএমে ত্রুটি ধরতে পারলে ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছেন সিইসি’।
এ বিষয়টি নিয়ে দল ও নানা মহলে সমালোচনার মধ্যে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন কাজী হাবিবুল আউয়াল।
তিনি বলেন, বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে— সিইসি ১০ মিলিয়ন ডলার ঘোষণা করেছেন। এটি উদ্ভট কথা। সিইসি এ ধরনের উদ্ভট কথা বলতেই পারেন না। তবে কিছুদিন আগে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় ইভিএম সংশ্লিষ্টদের কেউ না কেউ এ ধরনের কথা বলে থাকতে পারেন।
নির্বাচন কমিশনার আনিছুরের পক্ষে অবস্থান নিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের বক্তব্য শোনার পর ইন্টারনাল তদন্ত শুরু করলাম। কেউ তার ভালোবাসা-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে পারেন, ইভিএম যারা তৈরি করছেন তাদের মধ্যে কেউ বলেছেন। ওইভাবে কেউ একজন বলেছেন, সেখান থেকে জিনিসটা এসেছে।
কিছুটা স্মৃতিভ্রম হয়ে এ নির্বাচন কমিশনার ১০ মিলিয়ন ডলারের কথা বলতে পারেন বলে মন্তব্য সিইসির।
তিনি বলেন, এটা কমিশনের বক্তব্য নয়। কোনোভাবে কমিশনের কোনো কর্মচারীও একথা বলেননি, কমিশনার তো দূরের কথা, বলতে পারেন না। মিডিয়ার সামনে কথা বলতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলি। কমিশনকে অপদস্ত করার জন্য, সিইসিকে অপদস্ত করার জন্য বলেননি। কথাটা আসলে কিছুটা স্মৃতিভ্রমভাবে হয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি।
নির্বাচন কমিশনারদের কথা বলার ক্ষেত্রে সতর্ক অবস্থান নেওয়া উচিত, দায়িত্বশীল হওয়া উচিত মন্তব্য করে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, এর মাধ্যমে ইসির অবস্থান অবনমিত হয়েছে। ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে এতে। ইসির প্রতি মানুষ আস্থা আনতে চায়, শুরুতে যদি বিনষ্ট হয়ে যায় তাহলে জনপ্রত্যাশিত নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এখনও চেষ্টা করছি। চার কমিশনার ও আমি অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দায়িত্ব পালন করার জন্যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
আরও কয়েকটি বৈঠক করে ইভিএম নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান কাজী হাবিবুল আউয়াল।
তিনি বলেন, মাত্র পাঁচ-সাতদিন আগে চিঠি দিয়ে সবাইকে জানালাম— ইভিএম নিয়ে আমার কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হইনি। কোনো চাপের মুখে আমরা মাথানিচু করছি না। আমরা যদি ১০ মিলিয়ন ডলার ঘোষণাই করে দিই, তাহলে হলে ইয়ে (সংলাপ) হবে কেন? আমরা এখনও সিদ্ধান্ত নিইনি।
এ ছাড়া ইভিএম নিয়ে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার সময় এখনও আসেনি বলে জানান তিনি।
সিইসি বলেন, ইভিএম নিয়ে চ্যালেঞ্জ নেব কি, এখনও সেই সময়টাই তো আসেনি। বারবার বলেছি দায়িত্বশীল পদে আছি। এ নিয়ে আরও দশটা (মিটিং) হবে, এখন যদি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিই— ইভিএমে কোনো ত্রুটি নেই এটি হতে পারে না।
নির্বাচন কমিশনার আনিছুরের বক্তব্যের সঙ্গে সমর্থন জানিয়ে ‘দিনের ভোট দিনেই হবে’ বলে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ভোট তার নিয়মানুযায়ী হবে, দিনের ভোট দিনেই হবে। ভোট রাতে হবে না—এটা স্পষ্ট করে বলতে চাই। আমাদের উনি (ইসি আনিছুর) মাদারীপুরে স্পষ্ট করে বলতে চেয়েছেন, দিনের ভোট দিনেই হবে।
ইভিএম নিয়ে বক্তব্য আসার পর বিএনপি নেতাদের সমালোচনাকেও ইতিবাচকভাবে দেখেন বলে জানান সিইসি।