ভোটগ্রহণ শেষ, বেসরকারি ফলাফলে এগিয়ে এরদোয়ান

তুরস্কের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো রান-অফ নির্বাচন। রোববার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টায় ভোটগ্রহণ শেষে এখন গণনা চলছে।

এই ভোটে দুই দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও বিরোধী জোটের প্রার্থী কেমাল কিলিচদারোগলুর মাঝে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

রোববার সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে তা শেষ হয়েছে বিকেল ৫টায়। এবারে দেশটিতে ভোটার ছিলেন ৬ কোটি ৪০ লাখ মানুষ।

স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর গণমাধ্যমে নির্বাচনী ফল প্রকাশের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। এর পরপরই দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা আনাদোলু ভোটের প্রাথমিক ফলে বেসরকারিভাবে রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এগিয়ে রয়েছেন বলে জানিয়েছে।

আনাদোলু বলছে, দেশজুড়ে রান-অফ নির্বাচনের ভোটগণনা শুরু হয়েছে। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে ৮২ দশমিক ৬ শতাংশ ব্যালট বাক্সের ভোট গণনা শেষ হয়েছে।

এই ব্যালট বাক্সের গণনায় দেশটির ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এগিয়ে রয়েছেন। আনাদোলুর মতে, প্রাথমিকভাবে পাওয়া আংশিক ফলে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ৫৫ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। আর তার বিরোধী প্রার্থী কেমাল কিলিচদারোগলু পেয়েছেন ৪৪ দশমিক ২০ শতাংশ ভোট।

অন্যদিকে, বিরোধীদের সমর্থিত সংবাদ সংস্থা আনকাও দেশটির জাতীয়তাবাদী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কেমাল কিলিচদারোগলুর চেয়ে এরদোয়ান এগিয়ে রয়েছেন বলে জানিয়েছে। আনকা বলছে, প্রাথমিকভাবে ৮৮ শতাংশ ব্যালট বাক্সের ভোট গণনায় এরদোয়ান ৫০ দশমিক ০৬ শতাংশ আর ছয়দলীয় জোটের প্রার্থী কেমাল কিলিচদারোগলু ৪৯ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। যদিও প্রথম দিকে এরদোয়ানের চেয়ে কেমাল কিলিচদারোগলু এগিয়ে আছেন বলে জানায় এই সংবাদ সংস্থা।

তবে প্রাথমিক এই ফল মোট ভোটের হার নয়। দেশটিতে এক লাখ ৯২ হাজার ২১৪টি ব্যালট বক্সে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই ব্যালট বক্সের অনুপাতে প্রাথমিক ফল প্রকাশ করা হয়েছে। প্রত্যেক বক্সে ভোটের সংখ্যা ভিন্ন রয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

আনাদোলুর মতে, দুই সপ্তাহ আগের ভোটের হারের চেয়ে রোববারে ভোট চার শতাংশ কম পড়েছে। গত ১৪ মে অনুষ্ঠিত প্রথম দফার ভোটে ৮৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করলেও এবারে তা প্রায় ৮৪ শতাংশ বলে জানিয়েছে এই সংবাদ সংস্থা।

• প্রথম দফার ভোটের ফল

গত ১৪ মে দেশটিতে অনুষ্ঠিত প্রথম দফার নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। অন্যদিকে, তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কিলিচদারোগলু পান ৪৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ ভোট।

আর জাতীয়তাবাদী রাজনীতিক হিসাবে পরিচিত সিনান ওগান পেয়েছিলেন ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ ভোট। দ্বিতীয় দফার ভোটের আগে এরদোয়ানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন তিনি।

তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা আনাদোলু বলছে, প্রথম দফার নির্বাচনে তুরস্কের ৬ কোটি ৪০ লাখ ভোটারের মাঝে ৮৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।

• রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান

> একে পার্টি নামে পরিচিত তুরস্কের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলভমেন্ট পার্টি নেতৃত্বাধীন পিপলস অ্যালায়েন্ট জোটের প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।

> ৬৯ বছর বয়সী এই রাষ্ট্রনেতা তুরস্কের ক্ষমতায় আছেন ২০ বছর ধরে। এর মধ্যে ৯ বছর প্রেসিডেন্ট এবং ১১ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

> ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তুরস্কের অন্যতম বৃহৎ শহর ইস্তাম্বুলের মেয়র ছিলেন তিনি।

> বর্তমানে তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এরদোয়ান।

> ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট আর সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির মাঝে এবারের এই নির্বাচনর তার জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

• কেমাল কিলিচদারোগলু

> দেশটির ছয়দলীয় জোট ন্যাশন অ্যালায়েন্সের হয়ে এরদোয়ানের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৭৪ বছর বয়সী এই রাজনীতিখ।

> এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নিজের রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।

> রাজনীতির মাঠে পা রাখার আগে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ ছিলেন তিনি। নব্বইয়ের দশকের বেশিরভাগ সময় দেশটির সামাজিক বীমা ইনস্টিটিউশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

> তুরস্কের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দল কুর্দিপন্থী এইচডিপির সমর্থনে ছয়-দলীয় ন্যাশন অ্যালায়েন্সের প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি।

> তিনি তুরস্ককে একটি শক্তিশালী সংসদীয় ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।