উত্তাল বাংলাদেশ। একদিকে বইছে আনন্দের জোয়ার ঠিক যেন আলোর উলটো পিঠের অন্ধকারের মতো ক্রমেই বাড়ছে ধ্বংসযজ্ঞ। একের পর এক স্থানে চলছে হামলা ও লুট। তাদের মধ্যে রয়েছেন একাধিক তারকাও। কখনও প্রযোজক-অভিনেতাকে খুন, কখনও প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়কের বাড়িতে ভাঙচুর। এসবের হাত রক্ষা পাননি ফোকব্যান্ড ‘জলের গান’-এর শিল্পী রাহুল আনন্দও।
‘এমন যদি হতো’, ‘বকুল ফুল’সহ বেশ কিছু শ্রোতাপ্রিয় গানের গায়ক রাহুল আনন্দ। সোমবার শিল্পীর বাড়ি এবং সেখানে থাকা শতাধিক যন্ত্র তছনছ করেছে দুর্বৃত্তরা। এটি শুধু গায়কের বসতবাড়ি ছিল না, ব্যান্ডের অনেক গান লেখা থেকে সুর হয়েছে এ বাড়িতে। গানের অফিশিয়াল স্টুডিও হিসেবেও ব্যবহৃত হতো বাড়িটি। দলের সবার দলগত সংগীতচর্চা থেকে শুরু করে সব স্টুডিও ওয়ার্ক-রেকর্ডিং, মিক্সিং, এডিটিং হতো এখানেই।
বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সব সময় সক্রিয় দেখা গেছে রাহুল ও তার দলকে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংহতি জানিয়েও নিজের দলের সদস্যদের নিয়ে রাজধানীর রবীন্দ্রসরোবরে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। তবে ছাত্র-জনতার বিজয়ের পর সহিংসতা থেকে রক্ষা পেলেন না তিনি। তছনছ করা হয়েছে তার বাড়ি। দলনেতা ও ভোকাল রাহুল আনন্দের বাড়িতে হামলার বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে জলের গান। বিবৃতির সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে একটি গান। এই বাড়িতে রেকর্ড করা শেষ গান।
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ধানমন্ডি বত্রিশ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। ওই সড়কেই থাকতেন জলের গানের অন্যতম এই সদস্য।
জলের গানের মূল ভোকালিস্ট রাহুল আনন্দ এক গণমাধ্যমে জানান, কিছু ছেলেপেলে এসে তাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলল, প্রতিবাদ করে গায়ক তাদের বলেন, তিনিতো দেশের মানুষের জন্য গান করেন। বৈষম্যবিরোধি আন্দোলনেরও সমর্থক ছিলেন। তবুও তার বাড়িতে কেন হামলা করছে?
রাহুলের কথা শুনেই চটে যায় দুর্বৃত্তরা। গায়কদের দ্রুত বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য হুমকি দেয়। পরে গায়ক বের হয়ে আসলেই শুরু হয় বাড়িটিতে আগুন দেওয়া হয় এবং ব্যাপক লুটপাট চালানো হয়। ঘর থেকে লেপ-তোষকও নিয়ে যেতে দেখা যায়। এসিও খুলে নিয়ে যায় লুটপাটকারীরা।
আগুন, ভাঙচুর, লুটপাট হওয়ার পর ব্যান্ড জলের গানের অফিসিয়াল পেজ থেকে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। শেখানে তারা লিখেছেন, ‘যারা নিয়মিত এই বাড়িতে যাতায়াত করতেন, তারা জানেন যে রাহুল আনন্দ ও উর্মিলা শুক্লার বাড়িটির সাদা গেটটি সবসময় খোলাই থাকতো। তাতে তালা দেয়া হতো না। যে কেউ, যেকোনো দরকারে যেন দাদার কাছে পৌঁছোতে পারে সেই ভাবনায়। আর যারাই দিনের যেকোনো প্রান্তে এই বাড়িতে এসেছেন, সকলেই একটি চিত্রের সঙ্গে খুব পরিচিত, তা হলো- রাহুল আনন্দ মাটিতে বসে একটি সিরিশ কাগজ হাতে নিয়ে তার নতুন বাদ্যযন্ত্রের কাঠ ঘষছেন। জলের গানের করা পোস্টে সবার উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে ব্যান্ডটি লিখেছেন, ‘তবে কি এই ঠিকানায় আবাস হওয়াটাই কিছু মানুষের এত ক্ষোভের কারণ? এত রাগের বহিঃপ্রকাশ? যারা ইতিমধ্যে সেখানে গিয়েছেন কিংবা ফেসবুকে পোস্ট দেখেছেন তারা সকলেই খবরটি জানেন। সকলের জন্য নিরন্তর ভেবে যাওয়া মানুষটিকে পরিবারসহ এক কাপড়ে তার নিজ ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এর প্রভাব হয়তো আজীবন লালিত থাকবে তার সন্তানের মনে; যার বয়স কিনা মাত্র ১৩ বছর – ভাবতেই কষ্ট হয়। এতদিন ধরে তিলতিল করে গড়ে তোলা স্বপ্ন সংসারের সবকিছু দাউদাউ করে জ্বলেছে চোখের সামনে। কিছু মানুষের ক্রোধ এবং প্রতিহিংসার আগুনে! এই বাদ্যযন্ত্র, গান বা সাজানো সংসার হয়তো আমরা দীর্ঘ সময় নিয়ে আবার গড়ে নিতে পারবো। কিন্তু, এই ক্রোধ আর প্রতিহিংসার আগুনকে নেভাবো কিভাবে!