ভাল নেই হবিগঞ্জের চার উপজেলার মানুষ, প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম

হবিগঞ্জে বাড়ছে থই থই পানি! চোখ রাঙাচ্ছে খোয়াই, কালনী, কুশিয়ারা শহরবাসী, হাওরবাসীর কপালে চিন্তার ভাঁজ! ইতিমধ্যে ডুবে গেছে জেলার নবীগঞ্জ, বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ, লাখাই উপজেলা। প্রতিদিনই নতুন করে কোন না কোন গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। লাখাই উপজেলার মোড়াকরি গ্রামের বাজারে যাওয়ার রাস্তায় অবস্থিত একমাত্র পাকা ব্রীজটি বন্যার পানিতে সম্পুর্ণ ধ্বসে গেছে। আজমিরীগঞ্জে মাছ ধরতে গিয়ে পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে তারা মিয়া (৫০) নামের এক জেলের মৃত্যু হয়েছে।

ইতোমধ্যে জেলার ৪টি উপজেলার ২৮টি ইউনিয়নের প্রায় চার শতাধিক গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার পরিবার। দূর্ভোগে পড়েছে লাখ-লাখ মানুষ। এর মধ্যে গত কয়েকদিন যাবত বন্যাকবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবার ও তীব্র বিশুদ্ধ পানি সংকট। যদিও জেলা প্রশাসন বলছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করে ত্রাণ সহযোগীতা দেয়া হচ্ছে।

সবশেষ জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যমতে, হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং, নবীগঞ্জ ও লাখাই উপজেলার ২৮টি ইউনিয়ন পুরোপুরি বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। আর এসব এলাকায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৪ হাজার ৫৮১টি পরিবার। এর মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন ১৮ হাজার ৪১০ জন মানুষ। তাদের জন্য এরই মধ্যে সরকার থেকে ৭৬৩ টন চাল, ২০ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা, ২ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, সিলেট ও সুনাগঞ্জের বন্যার পানি কালনি-কুশিয়ারা দিয়ে নামছে হবিগঞ্জে। অন্যদিকে মেঘনা নদীর পানি বেড়ে বইছে উজানে। এতে উজান-ভাটি দু’দিক থেকেই হবিগঞ্জে ঢুকছে পানি। সেই সাথে তীব্র হচ্ছে বন্যা পরিস্থিতি। এমতাবস্থায় গত তিনদিন ধরে টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাড়তে থাকে জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি। এরই মধ্যে কালনি-কুশিয়ারা ও খোয়াই নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করে। ফলে সোমবার থেকে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়।

এদিকে, আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং, নবীগঞ্জ ও লাখাই উপজেলার প্লাবিত হওয়া গ্রামগুলোর বেশ কিছু পরিবার স্থান নিয়েছে আশ্রয় কেন্দ্রে। বাড়ি-ঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গবাদি পশুপাখি নিয়েও অনেকে পড়েছেন বিপাকে। ডুবে গেছে টিউবওয়েল ও টয়লেটও। যে কারণে দূর্ভোগের মাত্রা চরম আকার ধারণ করছে। দেখা দিয়েছে খাবার ও তীব্র বিশুদ্ধ পানি সংকট। অনেককেই আবার যে সব স্থানে টিউবওয়েল ডুবে যায়নি সেই সব স্থান থেকে নৌকা অথবা কলা গাছের ভেড়া করে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্যমতে, এ পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছে। সেখানেও রয়েছে তীব্র বিশুদ্ধ পানি সংকট।

আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নেয়া আমির আলী নামে এক ব্যক্তি জানান, বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে তার ঘর-বাড়ি। পরে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি স্কুলে। শুধু তিনিই নন সেখানে অবস্থান করছে আরো প্রায় ৩০টি পরিবার। তিনি বলেন, কোন রকম দু’বেলা দু’মুটো ভাত রান্না করে খেতে পারলেও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। গ্রামের দূরবর্তী অন্যএকটি বাড়ি থেকে প্রতিদিন দুই বার নৌকা করে গিয়ে পানি আনতে হচ্ছে। শরিফা খাতুন নামে এক নারী জানান, পানির সংকটতো রয়েছেই। তারমধ্যে আমাদের ঘরের খাবারও পুরিয়ে যাচ্ছে। দুইদিন হল আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছি কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোন ত্রাণ পাইনি। খাদিজা আক্তার নামে অপর আরেক নারী বলেন, চার দিন হয়েছে আমি আমার পরিবার নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছি। এখন পর্যন্ত খাদ্য সহায়তা পাইনি। খাবার পানিরও সংকট রয়েছে। তবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় কুপি ও মোমবাতি জ্বালাতে হচ্ছে আমাদের।

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যে কারো জরুরী ভিত্তিতে খাবারের প্রয়োজন হলে ৩৩৩ হটলাইনে কল দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। তিনি বলেন, বন্যার্তদের জন্য শুকনো খাবারের প্যাকেট দেয়া হচ্ছে। এতে চিড়া, চিনি, মুড়ি, বিস্কুট, মোমবাতি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যবলেট, খাবার স্যালাইন ও দিয়াশলাই দেওয়া হয়েছে।