ভারি বর্ষণে ঈদের দিনে পানিতে তলিয়ে গেছে সিলেটে নগরীর অধিকাংশ এলাকা। এতে ঈদ আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে নগরবাসীর। রোববার মধ্যরাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত ভারি বর্ষণে ডুবে গেছে নগরীর বিভিন্ন এলাকা। অনেকের বাসা-বাড়িতে হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি দেখা গেছে। রাস্তাঘাটও কোমর সমান পানিতে ডুবে আছে।
এ অবস্থায় সোমবার (১৭ জুন) সকালে ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামায়াতে যেতে পারেননি মুসল্লীরা। ফলে অনেকে পানি মাড়িয়ে পাড়া-মহল্লার মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।
এদিকে, পানিতে বাসাবাড়ি ও রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় কোরবানীর পশু জবাই করা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মানুষজন। অনেকে উচু এলাকায় গিয়ে পশু জবাই করে বাসা-বাড়িতে নিয়ে আসছেন। কেউ কেউ পশু জবাই করার জন্য পানি নামার অপেক্ষা করছেন। অবশ্য কিছু কিছু এলাকায় পানি নামতে শুরু করেছে।
রোববার মধ্যরাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত ভারি বর্ষণে সিলেট নগর এলাকার শাহজালাল উপশহর, দরগামহল্লা, পায়রা, সুবিদবাজার, বনকলাপাড়া, চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার, কাজলশাহ, মেডিক্যাল রোড, বাগবাড়ি, কালীবাড়ি, হাওলাদারপাড়া, সোবহানীঘাট, উপশহর, যতরপুর, তেরোরতন, সোনারপাড়া, কেওয়াপাড়া, সাগরদিঘিরপার, পাঠানটুলা, মিয়া ফাজিলচিশত, জালালাবাদ, হাউজিং এস্টেট, শাহী ঈদগাহ, ঘাসিটুলা, হাওয়াপাড়া, মীরাবাজার, শিবগঞ্জ, মাছিমপুর, জামতলা ও তালতলা এলাকায় পানি থই থই করছে। রাস্তাঘাট কোথায় হাঁটু পর্যন্ত, কোথাও কোমর পর্যন্ত ডুবে আছে। অনেক এলাকায় বাসাবাড়িতে পানি ডুবে ঈদের সকালে দারুণ ভোগান্তিতে রয়েছেন মানুষ।
আবহাওয়া অফিস বলছে ২৪ ঘন্টায় সিলেটে ১৭৩ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আরও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে গতকাল সিলেটে ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছিল আবহাওয়া অফিস।
এদিকে বৃষ্টিপাত উজানের ঢলে নদ নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে তিনটি নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এছাড়াও জেলার অন্যান্য নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পাউবো জানিয়েছে, বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি নদীর পানি তিনটি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সোমবার ৯ টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এছাড়া সারি নদীর পানি সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এছাড়াও সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বিপৎসীমার খুব কাছ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢল অব্যাহত থাকলে যেকোনো সময় বিপৎসীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, রোববার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় সিলেটে ১৭৩ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আজ সোমবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত আরও ৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।