ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের তারকাঁটা পাড়ি দিয়ে ভারতীয় চিনি আনতে গিয়ে ৯দিন ধরে নিখোঁজ বাংলাদেশী যুবক আবু্ল কালাম (৪০)।
গত বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) থেকে নিখোঁজ সিলেটের সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বরমসিদ্দিপুর গ্রামের আবুল কালাম। সে উপজেলার উত্তর রনিখাই ইউনিয়নের বরমসিদ্দিপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে।
সরজমিনে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ১২৫৫ নং পিলার এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা যায়, গত বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর বেলায় বরমসিদ্দিপুর গ্রামের কামাল মিয়া, মবিন মিয়া ও আবুল কালাম নামের তিন যুবক এক সাথে ১২৫৫ নং পিলার ঘেঁষা তারকাঁটার সীমানা পাড়ি দিয়ে ভারতে প্রবেশ করার কিচ্ছুক্ষণ পর কামাল মিয়া ও মবিন ভারতীয় একটি চিনির বস্তাসহ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দেশে প্রবেশ করে। এরপর কাঁটাতার পেরিয়ে ফের ভারতে প্রবেশ করে মবিন মিয়া। ঘন্টাখানেক পর সীমান্ত দিয়ে দৌড়ে দেশে আসে মবিন মিয়া। মবিন জানান, তারা দুজন (আবুল কালাম ও মবিন মিয়া) ভারতের উগ্রবাদী সংগঠন আলফা বাহিনীর কাছে আটক হয়েছিলেন। কৌশলে মবিন মিয়া পালিয়ে আসতে পারলেও আবুল কালামকে আটক করে মারধর করছে আলফা বাহিনীর লোকেরা।
এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে আবুল কালামের পরিবারসহ স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। তারা কালাইরাগ ক্যাম্পের বিজিবির সাথে যোগাযোগ করে তাঁর পরিবারের লোকজনসহ স্থানীয়রা ভারতীয় খাসিয়া নেতাদের সাথে বারবার যোগাযোগ করে কালামকে ফেরত আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। ঐ দিনের পর থেকে কালামের আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।
এলাকাবাসী জানান, এর আগেও কোম্পানীগঞ্জের বরমসিদ্দিপুর ও মাঝেরগাঁও এলাকা দিয়ে সীমান্তের কাঁটাতার পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে প্রবেশ করে খাসিয়াদের কাছে আটক হয়। মাঝেরগাঁও গ্রামের আজিজুল ইসলামের ছেলে আল আমিন, একই গ্রামের আব্দুর রজাকের ছেলে মাসুম আহমদ ও মঙ্গাই মিয়ার ছেলে জহির মিয়া। তার বর্তমানে ভারতের শিলং জেলে বন্দী আছেন।
স্থানীয়রা জানান, জেলে আটক এই তিনজন সহ আরও অনেকেই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতীয় বিভিন্ন পণ্য আনতে গিয়ে খাসিয়াদের হাতে আহত ও নিহতের ঘটনা ছাড়াও প্রায় সময় বিএসএফ’র কাছে ধরা পড়ে দীর্ঘদিন জেল খেটে দেশে এসেছেন অনেকেই।
স্থানীয় বাসিন্দা আজির উদ্দিন জানান, গত ২৭ সেপ্টেম্বর আমি ও তজমুল আলী নিত্যপ্রয়োজনীয় কাঁচাবাজার আনতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের তিশাং বাজারে গিয়ে আসার পথে মবিন ও কালামকে দেখিছি তিশাং এলাকার একজন মহিলার সাথে খারাপ ভাষায় কথা বলছে। আমরা চলে আসার পর সন্ধ্যার সময় খবর পেয়েছি কালামকে ভারতে আটক হয়েছে।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ১২৫৫ নং পিলার ঘেঁষা বাড়ির বাসিন্দা আঙ্গুরা বেগম বলেন, আমি সীমান্ত এলাকায় লাকড়ির কাজ করার সময় কামাল, মবিন ও কালাম তাঁরকাটা পাড়ি দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে কামাল ও মুবিন চিনি নিয়ে দেশে আসার কিছুক্ষণ পর মবিন আবার ভারতে যায়। মবিন দ্বিতীয় বার ভারতে যাওয়ার ঘন্টাখানেক পর সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দৌড়ে দেশে এসে সবাইকে জানায় ভারতের আলফা বাহিনীর হাতে কালাম ও মবিন আটক হয়েছিল। কৌশলে মবিন পালিয়ে আসলেও আবুল কালাম আসতে পারে নাই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ফখরুল ইসলাম জানান, গত বুধবার আবুল কালাম অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়ে স্থানীয়দের নিয়ে ভারতের খাসিয়া নেতাদের সাথে বারবার যোগাযোগ করেছি কালামকে ফেরত দেওয়ার জন্য। খাসিয়া নেতারা কালামকে সীমান্ত এলাকায় এনে ছেড়ে দিবে বলেও দেয়নি। পরে ভারতীয় পুলিশ বা বিএসএফ এর কাছে দিবে-দিচ্ছে বলেও সময়ক্ষেপণ করে জানান তাঁরা কালামের কেন সন্ধান পায়নি।
উত্তর রণিখাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফয়জুর রহমান বলেন, ভারতে প্রবেশ করে কালাম নামের একজন নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়েছি। এর আগেও সীমান্তে অবৈধভাবে প্রবেশ করে কয়েকজন ভারতের জেলে আটক রয়েছে। আমার ইউনিয়নের বেশিরভাগ গ্রাম সীমান্তবর্তী হওয়ায় গ্রামের লোকজন ভারত থেকে বিভিন্ন পণ্য এনে দেশে ব্যবসা করে থাকে। অবৈধভাবে আসা-যাওয়ার পথে প্রায় সময় খাসিয়াদের হামলায় আহত ও আটকের ঘটনা ঘটে। তবে কালাম নিখোঁজ হওয়ার এক সপ্তাহ পার হলেও কোন খবর পাওয়া যায়নি।
কালাইরাগ ক্যাম্প কমান্ডার নায়েব সবেদার রফিকুল ইসলাম বলেন, গত বুধবার সিরাজুল ইসলাম নামের বরমসিদ্দিপুর গ্রামের একজন আমাদেরকে জানায় ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় ঘাস কাটতে গিয়ে তাঁর ছেলে আবুল কালাম নিখোঁজ হয়। এ খবর পেয়ে আমরা নিখোঁজ ব্যক্তির পরিবারকে থানায় নিখোঁজের জিডি করাে আমাদেরকে জিডি কপি দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় সকল ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বস্ত করি। কিন্তু তারপর থেকে তাঁরা আমাদের সাথে কোন ধরনের যোগাযোগ করে নাই।
নিখোঁজের পিতা সিরাজুল ইসলাম জানান, গত ২৭ সেপ্টেম্বর আমার বাড়ি থেকে তাঁর সাথের দুইজন আবুল কালামকে ডেকে নিয়ে যায়। তারপর থেকে ৯ দিন পার হলেও তাঁর ছেলের কোন সন্ধান পাওয়ায় যায়নি। তাঁরা দুই জন আমার ছেলেকে কোথায় নিয়ে গেছে আমরা জানি না। আমার ছেলেকে উদ্ধারের জন্য প্রথমে বিজিবির সাথে যোগাযোগ করেছি। তাঁরা থানায় জিডি করতে বলেছে কিন্তু থানা গেলেও পুলিশ সীমান্ত এলাকায় নিখোঁজ হওয়ার কারণে রাগান্বিত হয়ে জিডি না নিয়ে বিজিবির কাছে যেতে বলেছে।
এ ঘটনায় কালামের স্ত্রী হালিমা বেগম বাদী হয়ে সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৩ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছে। তাঁর অভিযোগ চোরাচালানের সাথে জড়িত ঐ ব্যক্তিরা কালামকে বাড়ি থেকে ডেকে নেওয়ার পর আর বাড়িতে ফিরে আসেনি।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি হিল্লোল রায় ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় একজন নিখোঁজের শুনেছি। দুই দেশের সীমান্তের বিষয় গুলো বিজিবি দেখে তাই এ বিষয়ে পুলিশের কোন বক্তব্য ও আইনিপ্রক্রিয়া নেই।