পদত্যাগের পরপরই গ্রেপ্তার করা হয়েছে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে। অবৈধভাবে জমি কেনাবেচায় জড়িত থাকা ও অর্থপাচারের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের অর্থনৈতিক গোয়েন্দা সংস্থা (ইডি)।
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) টানা সাত ঘণ্টা জেরার পর হেমন্ত সোরেনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে ভারতয়ি সংবাদমাধ্যম।
গ্রেপ্তারের আগে ইডির কর্মকর্তারা হেমন্তকে রাজভবনে নিয়ে যান। সেসময় জোটের সব বিধায়ককে রাজভবনে আসার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিধায়কদের রাজ্যপালের কাছে প্যারেড করানো হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ এভাবেই দিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বিধায়কদের রাজভবনের গেটে আটকে দেওয়া হয়। হেমন্ত তারপর সমর্থনকারী বিধায়কদের তালিকা রাজ্যপালের হাতে তুলে দেন।
হেমন্ত সোরেন প্রথমে তার স্ত্রীকে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাতে দলের কয়েকজন বিধায়ক আপত্তি জানান। তাছাড়া ছয় মাসের মধ্যে জিতে আসার বিষয়টিও ছিল। পরে সবার সম্মতিতে ঠিক হয়েছে, দলের প্রবীণ নেতা চম্পাই সোরেন পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হবেন। রাজ্যপালকেও সেটি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যপাল আমন্ত্রণ জানালে তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিতে পারবেন।
ইডি কর্মকর্তাদের অভিযোগ, হেমন্ত সোরেন ও তার সহযোগীরা জোর করে প্রচুর জমি দখল করেছেন। এই জমি কেলেঙ্কারি ও অর্থপাচারের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইডির দাবি, দালাল ও ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে এই কাজ করেছিলেন হেমন্ত সোরেন। তারা জমির দলিল বদল করেছেন, জাল দলিল তৈরি করেছেন। তাতে মালিকদের নামবদল করে দেখানো হয়েছে। তার ভিত্তিতে জমি কেনাবেচা হয়েছে। আর এসব করে হেমন্ত ও তার সহযোগীদের প্রচুর আর্থিক লাভ হয়েছে বলে ইডির এক কর্মকর্তা এনডিটিভি’কে জানিয়েছেন।
হেমন্তের দল ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) এই তদন্তকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে অভিযোগ করেছে। তাদের দাবি, নির্বাচনের আগে বিরোধী নেতাদের দমন-পীড়নের জন্য ভারতের সরকারি সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করছে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন ও কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি।
ঝাড়খণ্ডে হেমন্ত সোরেনের জোটসঙ্গী হলো কংগ্রেস। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে হেমন্ত সোরেনকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করলো ইডি। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মূলে আবার কুঠারাঘাত করা হলো। আইন সংশোধন করার পর তা দিয়ে এখন বিরোধী নেতাদের ভয় দেখানো হচ্ছে।
তার অভিযোগ, ঝাড়খণ্ডের মতো প্রতিটি বিরোধী শাসিত সরকারকে অস্থিতিশীল করতে উঠেপড়ে লেগেছে বিজেপি।
দিল্লি-ঝাড়খণ্ডের পাশাপাশি তেলেঙ্গানা, কেরালা এবং অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীদের বিরুদ্ধেও অর্থ পাচারের অভিযোগে তদন্তে নেমেছে ইডি। প্রত্যেক নেতাই তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ভারতে মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় এভাবে পদ ছাড়া ও গ্রেপ্তার হবার আরও নজির রয়েছে। এর আগে বিহারের মূখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব ও তামিলনাড়ুর মূখ্যমন্ত্রী জয়ললিতাও গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।