বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন কারাগারে ১ হাজার ৮৫০ জন বাংলাদেশি নাগরিক আটক বা বন্দি রয়েছেন। তন্মধ্যে অধিকাংশই পদ্ধতিগত কারণে অনিয়মিত অবস্থানের দায়ে অভিযুক্ত বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
রোববার (১২ জুন) বিকেলে সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান। দিনের শুরুতেই স্পিকার ডক্টর শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রশ্ন-উত্তর টেবিলে উপস্থাপন বলে ঘোষণা দেন।
মন্ত্রী বলেন, ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশের ৩০টি জেলার সঙ্গে ভারতের সীমানা বিদ্যমান। সামাজিক যোগাযোগ, সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন, অর্থনৈতিক আকান্তা প্রভৃতি নানাবিধ কারণে উভয় দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে।
তিনি জানান, কোনো সোর্স সূত্রে খবর পেলে ভারতে বাংলাদেশের মিশনসমূহ তা যাচাইপূর্বক কারাগারে আটক বাংলাদেশির বিষয়ে নিশ্চিত হয় এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করে প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা দিয়ে থাকে। মিশনসমূহ ভারতের সংশ্লিষ্ট কারাগার, পুলিশ স্টেশন/খানা, হাত ও ডিপোর্টেশন সেন্টার নিয়মিত পরিদর্শন করে থাকে এবং সেখানে আটক বাংলাদেশি নাগরিকদের আটকের কারণ উদ্ঘাটন, আইনি সহায়তা প্রদান, জেল কোড অনুযায়ী স্বাস্থ্য সেবা ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি বিষয়ে নিয়মিত ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। আটককৃত বিচারাধীন আসামিদের মামলা যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়াসহ সাজাপ্রাপ্তরা যাতে সাজার মেয়াদ শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গেই মুক্তি পায় তার ব্যবস্থাও গ্রহণ করে থাকে। ক্ষেত্র বিশেষে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে মধ্যস্থতা করে তাদের মুক্তকরণপূর্বক দেশে প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
এ ছাড়া বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বর্তমানে নারী ও শিশু পাচার রোধ, উদ্ধার ও পুনর্বাসন (আরআরআরই) সংক্রান্ত একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ভারতে আটককৃত পাচারের শিকার নারী ও শিশুদের স্বদেশ প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়ে থাকে।
বর্তমানে মিয়ানমারে বাংলাদেশি হিসেবে বিবেচিত মোট ৬৩ জন আটক রয়েছেন যারা অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগরত। তাদের সাজার মেয়াদ শেষ হলে প্রত্যাবাসন করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশী মৎস্যজীবীদের অনেকেই প্রতিকূল আবহাওয়া, নৌ ও সমুদ্রসীমা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকা, মাছ ধরার নৌকায় নেভিগেশনের ব্যাবস্থা না থাকাসহ অন্যান্য কারনে মিয়ানমারের সীমানায় প্রবেশ করে এবং মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক আটক হয়। মিয়ানমারে আটক ৬৩ জনের মধ্যে ১০ জনের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অবশিষ্ট ৫০ জনের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া চলমান। মিয়ানমারে বন্দি বা কারাভোগরত বাংলাদেশি নাগরিকদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ দুতাবাস সক্রিয়। দেশের সীমান্ত রক্ষাবাহিনীর মাঝে নিয়মিত পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে মিয়ানমার হতে কারামুক্ত বাংলাদেশিদের প্রত্যাবাসনে ব্যাবস্থা করা হয়। উল্লেখ্য, গত ২৩ মার্চ ২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ৪১ জন এবং ১ জুন ২০২২ তারিখে ৪ কারামুক্ত বাংলাদেশি নাগরিককে প্রত্যাবাসন করা হয়েছে।