ভারতকে বিদ্যুৎ করিডোর দেয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ-ভারত বিদ্যুৎ খাত সহায়তা বিষয়ক যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এতদিন পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি সামনে এনে বাংলাদেশ করিডোর দেয়ার ক্ষেত্রে যৌথ নদী কমিশনে সেটি তোলার দাবি জানিয়ে আসছিলো। তবে সেই দাবি থেকে সরে এসে যৌথভাবে ৭৬৫ কেভির বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণের বিষয়ে ভারতের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে ঢাকা।
ভারতের বিদ্যুৎ সচিব অলোক কমুারের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গেল দুই দিনে ঢাকায় আসেন। প্রতিনিধি দলে দেশটির বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম সচিব আবজাল হোসেন ছাড়াও উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানির প্রতিনিধিরা রয়েছেন।
বৈঠকে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হাবিবুর রহমান বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন। এছাড়া, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ হোসাইন ছাড়াও অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ডিজি মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, আজকের মিটিং দুটি এজেন্ডা ছিল। একটি ৭৬৫ কেভির সঞ্চালন লাইন নির্মাণ। সেটির বিষয়ে যৌথভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে ভারতীয় কোম্পানি জিএমআরের ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বৈঠকের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) সঙ্গে ভারতের সেন্ট্রাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন কোম্পানি যৌথভাবে একটি কোম্পানি গঠন করবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জমি দেবে আর ভারত অর্থায়ন করবে। তবে প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সহজ কোনো পদ্ধতি অনুসরনের ওপর জোর দিয়েছে দিল্লি।
চূড়ান্ত হওয়া বিদ্যুৎ করিডোরটি কাটিহার-পার্বতীপুর-বরানগরকে সংযুক্ত করবে। অর্থাৎ উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ৭৬৫ কেভির বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনটি ভারতের কাটিহার ও বরানগরকে সংযুক্ত করবে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৪০০ কেভি ক্ষমতার লাইন নির্মাণ করা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, ২০১৪ সাল থেকে ভারত বিদ্যুৎ করিডরের নেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করছিল। কিন্তু ঢাকা নানাভাবে বিষয়টিতে বিলম্বিত করছিল। কারণ সেভেন সিস্টারে (আসাম, মিজোরাম, অরুণাচল, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মনিপুর, নাগাল্যান্ড) জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করলে তার প্রভাব কতখানি পড়বে সে বিষয়ে কোনো দেশই নিশ্চিত নয়। এ অবস্থায় ঢাকা একটি যৌথ পরিবেশগত সমীক্ষার ওপর জোর দিয়ে আসছিলো।
ভারত দাবি করছে, এই অঞ্চলের সাতটি রাজ্যে অন্তত ৪০ হাজার মেগাওয়াট জল বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। তবে ওই অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুতের চাহিদা না থাকায় ভারত বাংলাদেশর ওপর দিয়ে তার অন্য অঞ্চলে বিদ্যুৎ নিতে চায়।