রাজধানীর গুলিস্তানের বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ব্যবসায়ীদের সব পণ্য পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ফলে সহায়-সম্বল হারিয়ে পথে বসেছেন মার্কেটের প্রায় তিন হাজার দোকানি। ঘটনাস্থলে পোশাক ব্যবসায়ীদের হতাশ হয়ে রাস্তায় বসে থাকতে দেখা যায়। অনেকে দিশাহারা হয়ে ছোটাছুটি করছেন। কেউবা স্বজনদের ফোন দিয়ে ঈদের স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার কথা বলছেন।
মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সকাল ৬টা ১০ মিনিটে রাজধানীর বঙ্গবাজারে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। এরপরই আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিট। তাদের পাশাপাশি কাজ করছে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সাহায্যকারী দল। যোগ দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একটি টিম। পুলিশ আশপাশের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।
বঙ্গবাজার মার্কেট, ইসলামিয়া মার্কেট, বঙ্গ ১০ কোটি মার্কেট, আদর্শ মার্কেট—এই চারটি মার্কেট এক জায়গায় হওয়ায় মূলত সবগুলোকেই লোকজন বঙ্গবাজার মার্কেট হিসেবে ডেকে থাকেন। এই চারটি মার্কেটে প্রায় তিন হাজার দোকান রয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। নানা রকম কাপড় থাকায় আগুনের তীব্রতা বাড়ছে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বঙ্গবাজারই দেশের সব থেকে বড় পাইকারি কাপড়ের মার্কেট। ঈদকে কেন্দ্র করে রোজা শুরুর পর থেকেই ধীরে ধীরে জমে ওঠে এ মার্কেটের ব্যবসা। এ বছরও জমতে শুরু করেছিল বঙ্গবাজারের কেনাবেচা। কিন্তু হঠাৎ লাগা আগুন সব কেড়ে নিয়েছে ব্যবসায়ীদের।
মাত্র দুই বছর আগে পোশাক ব্যবসার মাধ্যমে ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য ৪০ লাখ টাকা দিয়ে বঙ্গবাজারে একটি দোকান ভাড়া নেন ইব্রাহিম। আসন্ন ঈদের আগে নতুন মালামালসহ তার দোকানে ২০ লাখ টাকার বেশি মূল্যের মালামাল ছিল। কিন্তু আজ সকালের আগুনে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
ইমরান নামের এক ব্যবসায়ী জানান, শুধু তিনি নন তাদের পরিবার এবং আত্মীয়স্বজনদের এখানে বেশ কয়েকটি দোকান রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে তারা দোকানে নতুন মালামাল তুলেছেন। এ জন্য কেউ কেউ ধারদেনাও করেছেন। কিন্তু আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ছে ঈদ কেন্দ্রিক তাদের এ স্বপ্ন।
মার্কেটের দোকানিরা জানান, ঈদ উপলক্ষে শাড়ি, জিন্সের প্যান্টসহ বিপুল কাপড়ের স্টক ছিল তাদের দোকানে। সব দোকানে কাপড় থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। আগুনে পুড়ে গেছে সব পণ্য। সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন তারা।
ব্যবসায়ী ইমরান বলেন, আমার শ্বশুর আগুন লাগার খবর পেয়ে স্ট্রোক করেছেন। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সিরাজুল ইসলাম নামের আরেক ব্যবসায়ী আগুন লাগার খবর পেয়ে বঙ্গবাজারে ছুটে যান। তিনি বলেন, আমার দোকানে ২০ লাখ টাকার পোশাক ছিল। আমি প্রায় অর্ধেক পণ্য বের করতে পেরেছি, কিন্তু সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। পানির কারণে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
অনেকেই আগুনের মধ্যেই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই আশপাশের ভবন থেকে মালপত্র সরিয়ে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ভবনে প্রবেশ করে মালপত্র বস্তায় বেঁধে সরাতে দেখা যায় তাদের।
জানতে চাইলে ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান বলেন, কিছু করার নেই, ঝুঁকি হলেও অন্তত কিছু রক্ষা করতে হবে। আমরা পথে নেমে গেলাম। আগুনে সব শেষ করে দিল।
তবে এর মধ্যে বাড়তি বাধা হিসেবে যুক্ত হয়েছে উৎসুক জনতার ভিড়। জনতার ভিড়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসকে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত শত শত মানুষ আগুন নিয়ন্ত্রণে কোনো ধরনের সহায়তা না করে মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণে ব্যস্ত।
ব্যবসায়ী কালাম বলেন, ভাই সব তো পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিছু বাঁচানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু মানুষের ভিড়ের কারণে পারছি না। এত বড় বড় কাপড়ের বোঝা নিয়ে নামছি কেউ তো সহায়তা করেই না উল্টো ভিড়ের কারণে সামনে এগোতে পারছি না। এত মানুষের ভিড় না থাকলে আরও দ্রুত মালামাল নিয়ে আসতে পারতাম।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উৎসুক জনতার জন্য কাজ করা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। তাদের কারণে দোকানিরা তাদের মালামালও সরাতে পারছেন না।
সিদ্দিক হোসেন নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, শত শত লোক কোনো কারণ ছাড়াই এখানে দাঁড়িয়ে আছে, ছবি তুলছে ও ভিডিও করছে। আর আমরা যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মালামাল নিয়ে আসছি, তা দেখেও রাস্তা ছাড়ে না। তাদের সরানোরও কেউ নাই।